আপনার কি কখনও মনে হয়েছে যে এখানে আরও কিছু বাকি আছে? এমন কিছু আছে যা শুধু অস্তিত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়? নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলোতে সরাসরি কিছু বিবরণী দেওয়া হয়েছে যা জীবন এবং এর মধ্যে ঈশ্বরের ভূমিকার বিষয়গুলো নিয়ে মতামত উপস্থাপন করে।
আপনি হয়ত এমন একজন ব্যক্তির সম্পর্কে শুনেছেন যার জীবনের লক্ষ্য ছিল নির্দিষ্ট একটি পাহাড় আরোহন করা। অবশেষে সে যখন চূড়ায় পৌঁছায়, তখন সে চরমভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তখন তারআর কোথাও যাওয়ার ছিল না, আর তার জীবন থেকে তখনও কোন একটা জিনিসের ঘাটতি ছিল। এটা এমন একটি বিষয়ের মত যে, একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় চমৎকার একটি পুরষ্কার জেতার পরও হতাশ।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতাটাও এমনই ছিল। আমি যখন আমার পরবর্তী বছরগুলোতে ছিলাম, তখন সফলতা অর্জনের জন্য লোকেরা আমাকে যা যা করতে বলেছিল সে সবই আমি অর্জন করেছিলাম। আমি ভ্র্রাতৃত্ব বজায় রেখেছি এবং বিদ্যায়তনে বিভিন্ন সংস্থাগুলোর সাথেও জড়িত ছিলাম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খুব মজা করেছি, ভাল নম্বর পেয়েছি, এবং সুন্দরী মেয়েদের সাথে সময় কাটিয়েছি।
আমি যা কিছু করতে চেয়েছি এবং যা কিছু অর্জন করতে চেয়েছি তার সবই কলেজেই হয়েছিল। কিন্তু তবুও আমি তখন অসম্পূর্ণতার মধ্যে ছিলাম। তখন কিছু একটার ঘাটতি ছিল।
আমি অবশ্য এই বিষয়ে কাউকে কিছুই বলিনি। আমি বাহ্যিকভাবে এটা প্রকাশও করতাম না। হয়ত এমন কিছু লোকেরা আছে যারা আমার মত জীবন-যাপন করার ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু তারা জানে না যে আমি ভেতরে কতটা অসম্পূর্ণতা বোধ করতাম।
স্কুলে গতবছরের গ্রীষ্মকালে, আমি বাইবেল থেকে একজনকে একটি অংশ পড়তে শুনেছিলাম। আমি এর আগে আবৃত্তি করা বাইবেলের কিছু অংশ শুনেছিলাম, এবং এর কিছুটা অংশ পড়েছিলাম, কিন্তু কোন একটা কারণবশত এইবার এটাকে শুনতে একটু অন্যরকম লাগল। আমি বিষ্মিত হয়েছিলাম।‘‘আরে, এই জিনিসটি অর্থের উর্ধে। আমি প্রথমবারের মত উপলব্ধি করলাম যে বাইবেল কতটা সত্য এবং কতটা প্রাসঙ্গিক।
এটা এমন ছিল যে ঈশ্বর নিজেই যেন আমার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছেন... কিন্তু তবুও আমি তাঁকে আসতে দিচ্ছিলাম না। আমি এটাই ভেবে যাচ্ছিলাম যে আমরা জীবন কীভাবে পরিবর্তিত হবে এবং আমি যে অন্যরকম হয়ে গিয়েছি সেটা নিয়ে আমার বন্ধুরা কী ভাববে। আমি শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু যতই আমি এই বিষয়ে চিন্তা করছিলাম ততই আমি উপলব্ধি করছিলাম (ঈশ্বরের সাহায্য থাকলে, কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়) যে অন্যসব কিছু ছেড়ে তাঁকে বেছে নেওয়া এবং অন্যকাউকে বেছে না নেওয়াই সবচেয়ে ভাল আর এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।
পরবর্তীতে যা হল তা বর্ণনা করাটা একটু কঠিন। আমি শুধু এভাবেই বলতে পারি: আমি আবিষ্কার করলাম যে ঈশ্বর নিজেই সকল সম্পূর্ণতার সত্যিকারের উৎস। আমার অভিজ্ঞতাটি অন্যদের থেকে আলাদা নয়। তিনি যেভাবে চান সেভাবে যদি কেউ তাঁর অন্বেষণ করে তাহলে তিনি নিরপেক্ষভাবেই তাদের মধ্যে থাকেন। তিনি বলেছেন (এবং এখনও বলছেন,‘‘ “আমিই সেই জীবন-রুটি। যে আমার কাছে আসে তার কখনও খিদে পাবে না। যে আমার উপর বিশ্বাস করে তার আর কখনও পিপাসাও পাবে না।’’১
জীবনে অবশ্যই কিছু উত্থান এবং পতন, হতাশা, এবং সংগ্রাম রয়েছে। কিন্তু জীবনের আসল পরিপূর্ণতা দেন ঈশ্বর- যখন আমরা জানব যে তিনি জীবন্ত এবং সত্য, তিনিই আমার অস্তিত্বের কারণ, এবং সত্যিকারভাবে তাঁকে অন্বেষণ করাই হল জীবনের সত্যিকারের পরিপূর্ণতা।
আমার বেড়ে ওঠার সময় আমার মনে আছে যে আমি টিভিতে দ্যা উইজার্ড ওফ অজ দেখেছিলাম। হয়ত আপনারও এই কাহিনীটি মনে আছে। ডরোথি এবং তার বন্ধুরা অজের সেই জাদুকরের কাছে সাহায্যের জন্য যায়, আর অভ্যর্থনা পাবার পরিবর্তে তাদেরকে একটি রাগী, ভয়ংকর একটি শব্দ তাদের কাছে প্রায় অসম্ভব একটি কাজ দাবি করে, সেটি হল: দুষ্ট ডায়নীর জাদুর ঝাড়ু।
অজের জাদুকরের জন্য এটা অনেক কিছু ছিল।
আমার বেড়ে ওঠার সময় ঈশ্বরকে আমার এই অজের জাদুকের মতই মনে হত। আমি ভাবতাম তিনি সংকীর্ণমনা এবং বদমেজাজি আর এটাও ভাবতাম যে তিনি আমার সম্পর্কে খুবই অল্প জানেন। আমি শিশু থাকাকালীন সময়ে চার্চে তাঁর কিছু ছবি দেখে তাঁকে আমার প্রাচীন, অন্য জগতের ব্যক্তি, যার সাথে যোগাযোগ করা যায় না এমন একজন বলে মনে হতো। তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যু-এর ছবি দেখে-আমি বুঝতে পারতাম যে তিনি চরম ত্যাগস্বীকার করেছেন, কিন্তু তাঁকে দেখে মনে হতো তিনি অনিচ্ছায় এটা করেছেন। আমি ভা্বতাম সত্যিই তার সাথে কী করা হয়েছিল, আমি ভাবতাম যে আমি কতটা ভাল ব্যবহার করেছি, আর কতটাই বা তাঁর মানদন্ডের সাথে মানিয়ে চলে জীবন-যাপন করতে পেরেছি। আমি যদি কখনও তাঁর দ্বারা গ্রহণযোগ্য হতে চাই তাহলে আমাকে তাঁর কাছে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। আপনি যেমনটি ভাবছেন, সেরূপভাবেই ঈশ্বর আমার জীবনে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলেন না। তাঁকে বর্ণনা করার জন্য আমি চমৎকার শব্দটি ব্যবহার করতাম না।
তারপর, নবীন হিসেবে কলেজে ভর্তি হবার পরই এই সবকিছুর পরিবর্তন হয়ে যায়। পর্দাটি সরানো হয়। আমি জীবনে প্রথমবার, একজন আমাকে বাইবেল থেকে দেখায়—এমন একটি বই যেটিকে আমি ভাবতাম এর মধ্যে ধোঁয়াশা দিয়ে পরিপূর্ণ- সতিকারের ঈশ্বর কেমন সে সম্বন্ধে এমনই ধারণা ছিল। তিনি রাগী বা সংকীর্ণমনা নন—তিনি এগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি ভালবাসাপূর্ণ এবং দয়াশীল। তিনি জানতেন যে আমি একটি সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারতাম না এবং তাঁর মান অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে পারতাম না। তাই, তার ভালবাসার থেকে, তিনি সেই নিখুঁত মানুষ হলেন এবং আমার হয়ে সেই মানে চললেন।
আমি শিখেছি যে, যীশু খ্রীষ্ট আমার উদাহরণ নন, তিনি আমার পরিবর্তক ছিলেন। আমি তাঁর কষ্টভোগ অনুকরণ করার কথা ছিল না, কিন্তু অবশ্যই এর সদ্ব্যব্যবহার করার কথা ছিল। তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যু—যেটা আমি পরবর্তীতে আবিষ্কার করেছিলাম যে তিনি স্বেচ্ছায় এই ত্যাগস্বীকার করেছেন-সেখানে তিনি আমার পাপ এবং ব্যর্থতা নিয়ে বিচারাধীন হয়েছিলেন। ঈশ্বর আমার প্রতি তাঁর মহান ভালবাসা ক্রুশে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি যে আমাকে আগে থেকেই জানতেন সেটার প্রকাশ তিনি সেখানেই করেছেন। সেখানেই তিনি আমাকে গ্রহণ করেছেন। যেভাবে বাইবেল বলে,‘‘ যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে কোন পাপ ছিল না; কিন্তু ঈশ্বর আমাদের পাপ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই পাপের জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত থাকবার দরুন ঈশ্বরের পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়।’’২
আমি আবিষ্কার করেছি যে, পর্দার পেছনে নতুন কেউ আছেন যিনি সত্যিকারের গ্রহণযোগ্যতা দান করেন। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি যে, এই পর্দাটিকে পেছনের দিকে টানুন এবং নিজের জন্য তাঁকে খুঁজে বের করুন, এবং তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এবং ক্ষমা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করুন।
আমাকে সবসময় এটা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে জীবন অর্থপূর্ণ হওয়া উচিত। তবে এটা প্রত্যেকটি দিনের প্রতিটি মুহূর্তই হতে হবে এমন নয়। এটা কিছু মহুর্তের জন্য আসে, তারপর আবার চলে যায়। লেখক রাভি জাকারিয়াস এ সম্বন্ধে বেশ ভাল বলেছেন যে: যদি জীবনের বড় কোন অর্থ না থাকে... তাহলে জীবনটা কোন সারাংশ বা কারণ ছাড়াই, চলনশক্তিবিহীন হয়ে পড়ে।’’
আমি বেশ কয়েক বছর ধরেই দস্তয়েভস্কি, সার্ত্রে, নিত্শে, সক্রেটিস এবং অনেক দার্শনিকদের নিয়ে অধ্যয়ন করেছি—এমন কিছু যা আমার জীবনের উদ্দেশ্যকে খুব দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং অনুপ্রেরণা দেবে। কয়েক সপ্তাহ পর পরই আমি নতুন নতুন দর্শনের বই ‘‘পড়তে থাকি’’ এই আশায় যে যদি এটা দ্বারা কোন কাজ করে। কিন্তু যখন আমি এই দর্শনগুলো বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করি তখন এগুলোর ফলাফল আমাকে হতাশ করে। তাই আমার খোঁজ চলমান থাকল।
টাইম ম্যাগাজিনের আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা ,ড. ডেভিড আইকম্যান এই বিষয়ে কিছু আলোকপাত করেছেন। তার বেশ কয়েকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে, তিনি রাশিয়ান এবং চীনা ইতিহাস এবং সাম্যবাদী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, তিনি ৩০ টির ও বেশি দেশে কাজ করেছেন, তিনি ছয়টি ভাষায় দক্ষ, এবং জীবন বিষয়ক একজন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ। তিনি বলেছেন,‘‘ আমাদের প্রত্যেকেরই এখানে আসার নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য রয়েছে, এ বিষয়টি সম্পর্কে কেউই আপনাকে বলতে পারবেন না, কিন্তু এ সম্বন্ধে আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে জানতে পারেন।’’ ড. আইকম্যান যীশু খ্রীষ্টের সাথে সম্পর্ক তৈরী করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ড. আইকম্যান এভাবে বর্ণনা করেছেন,‘‘যখন আমি [বাইবেলে] যীশুর বাক্য শুনেছি, আমার তখন মনে হয়েছিল তিনি আমার অন্তরের সাথে কথা বলছেন, আর তিনি বলছিলেন,‘‘ “আমিই পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না।’’’ তখন তিনি যীশুর সাথে সম্পর্ক তৈরী করার প্রথম ধাপটির জন্য তাঁকে তার জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করতে বলেন। ড. আইকম্যান এটাও বলেছেন যে, ‘‘আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে.... যে কেউ যীশু খ্রীষ্টের কাছে যাবার জন্য এই প্রথম পদক্ষেপটি নেয় সে একটি আকর্ষণীয় জীবন পাবে।’’
ড. আইকম্যানের মত আমিও নাস্তিকবাদী প্রেক্ষাপট থেকে এসেছি। আর তার মত আমি এটাও খুঁজে পেয়েছি যে, যীশুর নিজের সম্বন্ধে বলা কথাগুলো অন্য সবার থেকে আলাদা। যীশু লোকদেরকে জীবন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিকোণের দর্শনগুলো তুলে ধরেন নি, তিনি লোকদেরকে তাঁর দিকে নির্দেশ করার বিষয়গুলো বলেছেন। যীশু বলেছেন তিনি পাপ ক্ষমা করতে পারেন, তিনি আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও অন্তরে শান্তি দিয়েছেন, এবং আমাদেরকে স্বাধীন জীবন-যাপনের জন্য সহায়তা করেন।
আমি এই বিষয়ে অটল ছিলাম যে, যদি ঈশ্বর থেকেই থাকেন তাহলে আমি তাঁকে জানতে চাই। কিন্তু আমি সন্দেহপ্রবণ ছিলাম। আমি আমার পরিচিত খ্রীষ্টিয়ানদের নিয়ে বিতর্ক এবং চ্যালেঞ্জ জানালাম। আমি এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে যীশুই ঈশ্বর। একদিন আমি সততার সাথে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ এবং যীশুর ঈশ্বরত্ব নিয়ে অধ্যয়ন করলাম, আর আমি বিভিন্ন যুক্তিসঙ্গত এবং ঐতিহাসিক বিষয়গুলো দেখে বিষ্মিত হলাম। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমি কি তাঁকে আমার জীবনে আসার জন্য এবং তিনি আমাকে দিয়ে যা করাতে চান তার জন্য অনুরোধ করব, নাকি আমি আমার জীবনের এই অধ্যায়টি সারাজীবনের জন্য বন্ধ করে দিয়ে ‘‘ঈশ্বরের’’ অস্তিত্বকে অস্বীকার করব?
এই বিষয়টি পুন:বিবেচনা করে, যীশুকে বিশ্বাস করার বুদ্ধিবৃত্তিক কারণ পাওয়া পর, আমি যীশুকে আমার জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করলাম। আর সেই দিনই আমার জীবনের অর্থ খোঁজার এই সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সমাধান হয়ে গেল।
আমি বিষ্মিত হয়েছিলাম যে আমি ঈশ্বরের সাথেও সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি। আমি এই সকল পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁর সাথে কথা বলেছি, তিনি যে আমার কথা শুনেছেন তা তিনি প্রকাশ করেছেন। আমি যে পেশার স্বপ্ন দেখেছি তার থেকেও অনেক বেশি বিলাসবহুল এবং আকর্ষণীয় জীবনের দিকে তিনি আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন আমি তাঁকে প্রশ্ন করেছি, এবং তিনি আমাকে বাইবেলের মাধ্যমে উপযুক্ত এবং সহায়ক উত্তর দিয়ে সাহায্য করেছেন।
এই সব বিষয়গুলো শুধুমাত্র একদিনের কোন অন্ধকারাচ্ছন্নতা বা ঝড়ের কারণে হয় নি। এটা ঈশ্বরের সাথে আমার উপভোগ্য দ্বি-মুখীক চলমান একটি খাঁটি সম্পর্ক ছিল, আর এটি এখনও চলমান আছে। এটা এজন্য হয় নি যে আমি একজন সাধু, কিন্তু এটা এজন্যই হয়েছে যে, যীশু খ্রীষ্ট তার জীবনেই প্রবেশ করেন যে কেউ তাঁকে সত্যিকারভাবে জানতে চায় এবং অনুসরণ করতে চায়।
ঈশ্বরকে অনুসরণ করার মাধ্যমে গভীর থেকে একটি আনন্দ উপলব্ধি হয়। অন্য কিছু নয়, কিন্তু যীশুকে জানার মাধ্যমেই আমি আমার জীবনের সত্যিকারের উদ্দেশ্য পেয়েছি।
সত্যিকারের একটি জীবনের মানে হল সফলতা দ্বারা পরিপূর্ণতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং উদ্দেশ্যকেন্দ্রীকতা। আমরা যীশুর সাথে সম্পর্ক তৈরীর মাধ্যমে এসব কিছু খুঁজে পাই। মানবজাতির ইতিহাসে কেউই যীশুর মত নিজের সম্পর্কে উক্তি এবং তা অলৌকিকভাবে প্রমাণ করে দেখায় নি। তিনি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছেন, তিনি পাপ ক্ষমা করতে পারেন, পিতা ঈশ্বরের কাছে যাবার একমাত্র পথ হিসেবে দাবি করেছেন। তিনি তাঁর সম্বন্ধে সেই সকল উক্তির প্রমাণস্বরূপ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। সত্যিই তিনি শুধু একজন মহান শিক্ষকের থেকে অনেক বেশি কিছু ছিলেন এবং সর্বকালের সবচেয়ে অনন্য ব্যক্তি।
বাইবেল বলে যে ঈশ্বর মানুষরূপে যীশুর মাধ্যমে আসলেন—‘‘ সেই বাক্যই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন।’’৩ তিনি ছিলেন ‘‘ ঈশ্বরের পূর্ণ ছবি।’’৪ সংক্ষেপে বলতে গেলে, ঈশ্বর কেমন তা যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে কীভাবে আমারা তাঁর সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে পারি?
আমরা ভাল মানুষ হওয়ার মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে পারি না। আমরা ঈশ্বরের সুদৃষ্টি পাওয়ার চেষ্টা করি এটা তিনি চান না। আপনি কখনও এমন কোন সম্পর্কে জড়িয়েছেন যেখানে অন্যের সুদৃষ্টি জেতার জন্য আপনাকে চেষ্টা করতে হয়েছে? এতে কোন মজাই নেই।
ঈশ্বর আমাদেরকে এতটাই খাঁটিভাবে ভালবাসেন যে তিনি নিজেই তাঁর কাছে যাবার জন্য আমাদেরকে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন... কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। বর্তমানে, ঈশ্বর এবং আমাদের মধ্যে পাপ(আমাদের স্বার্থপরতা আমাদের রাগ, অন্যকে কষ্ট দিয়ে বলা কথা, আমাদের ধৈর্য্যহীনতা ,লোভ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ পায়) একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি যদি কখনও এই ভেবে বিষ্মিত হন যে আপনি এত প্রার্থনা করছেন সেগুলোর কোন ফলাফল নেই কেন, এটাই হল সেই কারণ। আমাদের পাপ আমাদেরকে পবিত্র ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।
তাহলে আমরা যাতে ঈশ্বরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে পারি সেজন্য ঈশ্বর কী করেছেন? যীশু খ্রীষ্ট (‘‘ঈশ্বর মাংসে মূর্তিমান’’) যখন স্বেচ্ছায় ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন তখন তিনি আমাদের সকল পাপকে তাঁর কাঁধে তুলে নিলেন। আমরা যাতে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা পাই এবং তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হই সেজন্যই তিনি এমনটি করলেন।
আমাদের সমস্যাটি একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী যাকে অপরাধের কারণে দন্ড দেয়া হয়েছে তার মাধ্যমে বুঝতে পারি। বিচারক তাকে ৩০ দিনের কারাদন্ড অথবা ১০০০ ডলার তার শাস্তির জরিমানা হিসেবে দিয়েছেন। সেই ছাত্রী দীর্ঘ সময় বা অর্থ পরিশোধ করতে অক্ষম। সেই বিচারক, এটা জেনেই তার গাউন খুলে ফেলে, বেঞ্চের সামনে তার নিজের চেকবই নিয়ে যান এবং সেই অর্থ পরিশোধ করেন। কেন? কারণ একজন বিচারক হিসেবে তিনি অপরাধকে উপেক্ষা করতে পারতেন না। কিন্তু যেহেকূ তিনি সেই ছাত্রীর পিতা, তাই তিনি তার মেয়ের পক্ষ হয়ে সেই অর্থ পরিশোধ করেন।
যীশু ক্রুশে আমাদের জন্য এই একই কাজ করেছেন। তিনি আমাদের পরিবর্তে নিজে লোকদের হাতে মার খেয়েছেন, আপমানিত হয়েছেন, বেত্রাঘাত এবং ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার মত মহান ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি তাঁর এই মহান ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের জীবনে আসতে চান এবং তিনি চান যেন আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিই।
তিনি চান যেন আমরা তাঁকে জানি এবং তাঁর ভালবাসা, আনন্দ এবং শান্তির অভিজ্ঞতা লাভ করি। যখন আমরা তাঁকে আমাদের জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করি, তখন আমরা তাঁর ক্ষমা পাই, এবং আমরা তাঁর সাথে একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হই যেটা অনন্তকাল স্থায়ী। যীশু বলেছেন,‘‘ দেখ, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ঘা দিচ্ছি। কেউ যদি আমার গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেয় তবে আমি ভিতরে তার কাছে যাব।’’৫
এখন যদি এটা আপনার অন্তরের আকাঙ্খা হয়ে থাকে, তাহলে আপনি নিম্নোক্ত প্রার্থনাটি করতে পারেন (কিন্তু এই কথাগুলো আপনার হৃদয়ের আকাঙ্খা থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়):
হে প্রভু, আমি স্বীকার করছি যে আমি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। আমার সকল পাপ ক্রুশে নিজের ওপর তুলে নেয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি তোমার ক্ষমা পেতে চাই। আমি তোমার সাথে একটি সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। আমি তোমাকে আমার জীবনের রক্ষাকর্তা এবং প্রভু হিসেবে আসার জন্য অনুরোধ করছি। দয়া করে আমাকে সেই সত্যিকারের জীবন দাও যেটা শুধুই তোমার কাছ থেকে আসে।
পাদটীকাসমূহ: (১) যোহন ৬:৩৫ (২) ২য় করিন্থীয় ৫:২১ (৩)যোহন ১:১৪ (৪)ইব্রীয় ১:৩ (৫) প্রকাশিত বাক্য ৩:২০
বাইবেল থেকে...
‘‘ঈশ্বরের পুত্রকে যে পেয়েছে সে সেই জীবনও পেয়েছে; কিন্তু ঈশ্বরের পুত্রকে যে পায় নি সে সেই জীবনও পায়নি।’’ (১ম যোহন ৫:১২)
‘‘তবে যতজন তাঁর উপর বিশ্বাস করে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি ঈশ্বরের সন্তান হবার অধিকার দিলেন।’’ (যোহন ১:১২)
‘‘ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।’’ (যোহন ৩:১৬)
‘‘ঈশ্বরের দয়ায় বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ... যেন কেউ গর্ব করতে না পারে।’’ (ইফিষীয় ২:৮-৯)
‘‘যদি কেউ খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল। তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে সব নতুন হয়ে উঠেছে।’’ (২য় করিন্থীয় ৫:১৭)
‘‘তোমাকে, অর্থাৎ একমাত্র সত্য ঈশ্বরকে আর তুমি যাঁকে পাঠিয়েছ সেই যীশু খ্রীষ্টকে জানতে পারাই অনন্ত জীবন।’’ (যোহন ১৭:৩)