আমরা যীশুর বিভিন্ন ধরনের ছবি সারা বিশ্বজুড়ে দেখেছি। এদের মধ্যে কোন ছবিটি আসল সত্যিকারের ছবি?
আপনি যদি অনেক টিভির প্রচার দেখে থাকেন, তাহলে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তাদের মূল উদ্দেশ্য হল: আপনার অর্থের দিকে। আপনার অর্থ বের করার জন্য সবসময়ই একটা পরিকল্পনা করা হয়। তারা প্রায়শই এই প্রতিশ্রুতি দেয় যে আপনি যত বেশি তাদেরকে দান করবেন (তাঁদের মিনিষ্ট্রিতে), ততবেশি ঈশ্বর আপনার জীবনে জাগতিক আশীর্বাদ করবেন।
অনেত মানুষই এই ধরণের অনুশীলনকে নিন্দা করে, কারণ এটা খ্রীষ্টের আদর্শের বিপরীত। যীশু কখনই অর্থের জন্য আকাঙ্খা করেন নি। এমনকি, তিনি দরিদ্রদের কাছ থেকে লাভবান হওয়া সেই সময়কার ধর্মীয় নেতাদের নিন্দা করেছেন। জেরুশালেম মন্দিরে, যখন যীশু তাদেরকে পণ্য কেনা বেচা করতে দেখলেন (এবং আরাধনার জন্য জিনিস কেনার জন্য দর-দাম ঠিক করছেন), তখন তিনি তৎক্ষণাক একটি চাবুক নিলেন এবং সারা মন্দিরে ঘুরে ঘুরে তাদের টেবিলগুলোকে উপরে ফেলছিলন ( এটা যীশুর নম্র ও মৃদু স্বভাবের প্রতিচ্ছবির একদম বিপরীত)।
যীশুর প্রাথমিক অনুসারীরা তাদেরকে নিন্দা করেছে যারা ‘‘নিজেদের লাভের জন্য যারা ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ব্যবসা করে’’। পৌল যিনি নতুন নিয়মের অনেকগুলো অংশই লিখেছেন, তিনি খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচারের জন্য এবং তিনি যাতে কারও জন্য ‘‘বোঝা’হয়ে না যান’’ সেজন্য তাবুতে বসবাস করেছেন।
জাগতিক সম্পদ কখনই কোন খেলার পরিকল্পনা হতে পারে না। খেলার পরিকল্পনাটি হল বরং, যীশুর অনুসারীদের অর্থনৈতিক অবস্থা যাই হোক না কেন—তাদের অন্তরের ভেতরে শান্তি, আনন্দ, তৃপ্তি যেন থাকে।
যীশুর শৈল্পিক চিত্রগুলো তিনি থাকাকালীন সময়ের আরও অনেক পরে আঁকা হয়েছে। তাই, তিনি দেখতে ঠিক কেমন ছিলেন সেটা আমাদের জানার কোন উপায় নেই। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাইবেল যীশুর শারীরিক উপস্থিতিকে তেমন গুরুত্ব দেয় না বলে মনে করা হয়। যিশাইয় ভাববাদী আমাদের বলেন যে, ‘‘ তাঁর এমন সৌন্দর্য বা জাঁকজমক নেই যে, তাঁর দিকে আমরা ফিরে তাকাই; তাঁর চেহারাও এমন নয় যে, আমাদের আকর্ষণ করতে পারে।’’ (যিশাইয় ৫৩:২)
যীশু দেখতে কেমন ছিলেন তা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ীট হল তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়ার পর, তিনি তাঁর শিষ্য থোমাকে বলেছিলেন, ‘‘ তুমি কি আমাকে দেখেছ বলে বিশ্বাস করছ? যারা না দেখে বিশ্বাস করে তারা ধন্য ‘’ (যোহন ২০:২৯) ।
শিল্পে, আমরা প্রায়ই দেখে থাকি যে যীশুকে লালচে চুল এবং নীল চোখের উজ্জ্বল চামড়ার মানুষ হিসেবে চিত্রিত করা হয়। আর আফ্রিকায় শিল্পে যীশুকে কালো বর্ণের চামড়ার মানুষ হিসেবে চিত্রিত করা হয় এবং এশিয়ায় তাঁকে এশিয়ানদের মত চোখবিশিষ্ট ভাবে চিত্রিত করা হয়। কিন্তু এগুলোর সবকিছুই মূল বিষয়টি থেকে আলাদা, কারণ যীশু তাঁর মায়ের দিক থেকে একজন ইহুদি ছিলেন (তাঁর পিতা ছিলেন ঈশ্বর)। তাই হয়ত তিনি ইহুদিদের মতই দেখতে ছিলেন।
খ্রীষ্টের অনুসারীরা সাধারণত পশ্চিমা গোলার্ধ থেকে এসেছেন বলে ধারণা করা হয়। তবে, যীশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু হয়েছিল এবং পরবর্তীতে সেখান থেকেই এটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে আফ্রিকা এবং এশিয়াতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা নিজেদেরকে যীশু খ্রীষ্টের অনুসারী হিসেবে দাবি করে। বর্তমানের সবচেয়ে বড় গীর্জাটি কোরিয়াতে রয়েছে।
বাইবেল আমাদের বলে যে যারা যীশুকে বিশ্বাস করে তারা বিভিন্ন জাতি, বংশ, দেষ ও ভাষার লোক হবে। (প্রকাশিক বাক্য ৭:৯)। তবুও সম্পূর্ণ কোন জাতির যীশুকে বিশ্বাস করার সম্ভাবনা কম। অবশ্য, এটা সহজভাবে চিন্তা করা যায় যে পাশ্চাত্য বিশ্বের সকলেই যারা নিজেকে ‘‘খ্রীষ্টিয়ান’’ বলে কোন ফরম পূরণ করে তারা আসলেই যীশুর সত্যিকারের অনুসারী। সর্বপরি, যীশু বলেছেন যে পথ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তার রাস্তা চওড়া। অনেকেই তার মধ্য দিয়ে ঢোকে। কিন্তু যে পথ জীবনের দিকে যায় তার পথ সরু; খুব কম লোকই তা খুঁজে পায়। ( মথি ৭:১৩-১৪)।
উদাহরণস্বরূপ, আনুপাতিক হারে বলতে গেলে, এমন হতে পারে যে, আমেরিকাতে এবং আফ্রিকাতে প্রায় একই সংখ্যক খ্রীষ্টিয়ান রয়েছে। আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না, কিন্তু ঈশ্বর জানেন। একমাত্র তিনিই মানুষের অন্তর জানেন। তিনি জানেন কে সত্যিকারভাবে তাঁর কাছে ফিরেছে আর কে ফেরে নি। আর তিনি জাতিরসমূহের ক্ষেত্রে পক্ষপাতহীন (প্রেরিত ১০:৩৪-৩৫)।
কিছু ধর্মীয় ‘‘পন্ডিতরা’’ যীশুকে নিরপেক্ষীকরণ করে খুব যৌক্তিকতার সাথে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। তাদের ধর্মতত্ত্বে যীশুর বিষয়ে (নতুন নিয়মের সুসমাচারগুলো থেকে) যা বেমানান সেগুলোর যে কোন কিছুই তারা মুছে ফেলতে চান।
মূলত, তারা যীশুকে বিজ্ঞ, অনুপ্রেরণামূলক এবং অর্ন্তদৃষ্টিসম্পন্নভাবে চান। যীশু যা যা বলেছিলেন সেগুলোর সাথে ঐতিহাসিক, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তব্য হিসেবে বিবেচিত বিষয়গুলোর জাগতিক মানদন্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। কিন্তু যীশুর নিজের ক্ষমতা, ঈশ্বরত্ত্ব, পাপের ক্ষমা করা এবং অনন্ত জীবন দেওয়া... এরকম বিবৃতিগুলোকে বাতিল করে দেওয়া হয়।
যদি আমরা যীশুর ছবি কিনি, তাহলে এই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। যদি যীশু শুধুই একজন অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষক হয়ে থাকেন, তাহলে কেন তারা তাঁকে নির্যাতন করবে এবং ক্রুশে দেবে? এবং যীশুর নিজের সম্বন্ধে বলা বিষয়গুলো উপেক্ষা করার সময়, কীভাবে আমরা জীবন সম্বন্ধে তাঁর অন্তর্দৃষ্টির উপর নির্ভর করব? এবং সবশেষে, যীশু যে আমাদের পাপের জন্য মারা গিয়েছেন এবং মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন এই বিষয়টি ঘোষণা করার জন্য প্রাথমিক অনুসারীরা কেন শহীদের মত স্বেচ্ছায় তাদের প্রাণ বিসর্জন দিলেন? যদি যীশু শুধুই একজন শিক্ষক হয়ে থাকেন, এবং ঈশ্বর না হন, তাহলে কেন এত মানুষ তাঁর প্রতি বিশ্বাস রক্ষার জন্য নিজেদের প্রাণ দিয়েছে?
এমন কি হতে পারে যে যীশু তাঁর শিক্ষায় তিনি যে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে তাঁর পরিচয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন এবং শাস্ত্রে তাঁর বিষয়ে যা লেখা আছে সেটাই কি সঠিক ঐতিহাসিক লিপি?
যীশুর বিষয়ে টিভি, শিল্প বা দর্শনশাস্ত্র থেকে তথ্য পাবার পরিবর্তে আমাদের সকলকে ঈশ্বর শাস্ত্র, তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তাঁকে জানার জন্য বলেছেন। তিনি যান যেন আমরা তাঁর কাছে যাই এবং তিনি আমাদেরকে তাঁর সম্পর্কে শিক্ষা দিতে চান।
যীশুর জীবনের আসল ছবি পাওয়ার জন্য এবং কেন তাঁর উপর বিশ্বাস রাখা অন্ধবিশ্বাস নয় সেগুলো জানতে, দয়া করে এটি দেখুন: অন্ধবিশ্বাসের উপরে।
► | কিভাবে ঈশ্বরের সাথে একটা সম্পর্ক শুরু করেন |
► | আমার একটি প্রশ্ন বা মন্তব্য আছে… |