অ্যাশলিন সেটিজ এর লেখা
আমি আমার স্পটলাইটের মধ্যে, রেডিও ছেড়ে এবং জানালার কাঁচ নামিয়ে গাড়িতে বসা অবস্থায় নিজেকে একাকী মনে করছিলাম। আমি একটি ঘরের চারপাশে হাসির শব্দ এবং বন্ধুদের মধ্যে থেকে এমন অনুভব করছিলাম। এটা আমি মধ্যরাতে, আমার স্বপ্নে এবং যখন আমি হঠাৎ করে অন্ধকারের মধ্যে জেগে উঠি তখন আমি এমন অনুভব করেছি।
একাকীত্ব। এটা আমাদের সবারই পরিচিত একটি অনুভূতি।
একাকীত্বের অনুভূতি একাকীত্বের ভয়ে পরিণত হতে পারে। আর একাকীত্বের ভয় একাকীত্ব এড়ানোতে পরিণত হতে পারে। আর ঘটনাতীতভাবেই, আপনি প্রতিদিন ১,০০০ বার্তা পাঠাচ্ছেন, মদ বা ভিডিও গেমস্ এ আপনার অনুভূতিগুলোকে ডুবিয়ে দিচ্ছেন, বা আপনি এমন সব লোকদের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছেন যাদেরকে আপনি জানেন না। -- এই সব কিছুই এ কারণে হয় যে এই পৃথিবীতে আপনি এক মিনিটের জন্যও একা থাকতে চান না। অথবা আপনি ঠিক এর বিপরীত কাজ করেন, যেটি নিজেকে নিজের ঘরে বন্দী রাখা এবং সম্পূর্ণভাবে মানুষের সাথে নিজেকে জড়িত রাখতে চান না। একবার যদি আপনি একাকী অনুভব করেন তাহলে এই একাকীত্ব থেকে বের হয়ে আসাটা প্রায় অসম্ভব কারণ আপনি... একা।
একটি প্রবাদ আছে যে, ‘‘ যার অন্তর তেতো সে তা নিজেই বোঝে; একজনের অন্তরের আনন্দের ভাগী অন্যে হতে পারে না।’’ (হিতোপদেশ ১৪:১০)। আমরা প্রত্যেকেই অন্যান্য মানুষদের থেকে মৌলিকভাবে পৃথক, এবং যদিও আমরা একে অন্যকে নির্দিষ্টভাবে কিছুটা বুঝতে পারি, কিন্তু আমরা তখনও সেই বিচ্ছিন্নতাটি অনুভব করব। আপনি যেমন ব্যক্তি সেটা কেউই সম্পূর্ণভাবে বোঝে না। আপনি যেভাবেই এর প্রতিক্রিয়া জানান না কেন, একাকীত্ব আমাদের সবার জন্যই বড় একটি যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা হতে পারে।
কখনও কি এটা ভেবে আবাক হয়েছেন যে আমরা কেন সৃষ্টি হয়েছি? বাইবেল এই ব্যাখ্যা দেয় যে ঈশ্বর আমাদেরকে সমাজের সাথে যু্ক্ত থাকার জন্য সংযুক্ত করেছেন। রোমান্টিক সম্পর্ক এবং এমনকি বন্ধুত্বকে আমরা প্রায়ই আদর্শ সম্পর্ক হিসেবে দেখি এই ভেবে যে যদি আমরা একজন সঠিক ব্যক্তিকে পাই তবে আমরা আর কখনই একাকীত্ব বোধ করব না। কিন্তু একাকীত্ব সুখী স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায়।
আমরা শুধুমাত্র অন্য মানুষদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য তৈরী হই নি, আমরা ঈশ্বরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য ও তৈরী হয়েছি। এমনকি সম্পদ, অর্জন, এবং সম্মান আমাদেরকে একাকীত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। পপ সংস্কৃতিতে অনেক উদাহরণ রয়েছে: প্রচুর পরিমাণে তালাক, আত্নহত্যা, এবং নেশার জাল হলিউডের ভেতরে ছড়িয়ে আছে। বাইবেলে এমন কিছু ব্যক্তির ঘটনা রয়েছে যাদের সব কিছু ছিল কিন্তু তবুও তারা একাকী বোধ করত আর যাদের কিছুই ছিল না তারা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু পেয়েছে।
শলোমন ইস্রায়েলের এমন একজন রাজা ছিলেন যাকে ঈশ্বর প্রচুর জ্ঞান দান করেছিলেন। আর আক্ষরিক অর্থে তার কাছে ছিল: বিশালাকার স্বর্ণের স্তূপ, বিরাট এক প্রাসাদ, আর শত শত পত্নী এবং উপপত্নি। আপনি হয়ত ভাবছেন শলোমন এই পৃথিবীর সবচেয় সমৃদ্ধশালী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্যহীন জীবন সম্পর্কে একটি বইয়ে লিখেছেন:‘‘ তবুও আমি যা কিছু করেছি আর যা পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করেছি তার দিকে যখন আমি তাকালাম তখন দেখলাম সবই অসার। এই সব কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। সূর্যের নীচে কোন কিছুতেই লাভ নেই।’’ (উপদেশক ২:১১) এই বিবৃতিতে আপনি তার একাকীত্ব এবং হতাশা সম্পর্কে বুঝতে পারছেন।এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, একদিন যীশু একটি শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, তার সাথে একজন কুষ্ঠরোগী লোকের সাক্ষাৎ হল। তখনকার কুষ্ঠরোগীরা বর্তমানের কুষ্ঠরোগীদের চেয়ে দশগুণ বেশি বিভৎস ছিল; তাই মানুষজন তাদেরকে দেখে অনেক ভয় পেত। কুষ্ঠরোগীরা তখন সমাজচ্যুত এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল, তারা প্রায়শই বন্ধু এবং পরিবার থেকে পরিত্যক্ত ছিল এবং তারা রাস্তার পাশে শুধুমাত্র কিছু খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা করত। এই কুষ্ঠরোগীর বিষয়টি কল্পনা করুন যে সে ধুলা এবং ময়লার মধ্যে বসে আছে এবং সকলেই তাকে উপেক্ষা করে চলছে। সেই রোগী কারও কাছে ফিরে যেতে পারে না এবং তার নামে কারও কাছে আর্থিক সাহায্যও চাইতে পারে না। সেই রোগী যীশুর কথায় উঠে দাঁড়াল এবং হেঁটে যীশুর কাছে আসল, সে হাঁটু গেঁড়ে যীশুর কাছে সুস্থতার জন্য অনুরোধ করল। যেই ব্যক্তি কয়েক বছরে কারও স্পর্শ পায় নি- যীশু সেই কুষ্ঠরোগীকে স্পর্শ করলেন- আর তাকে সুস্থ করলেন। তখন সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিটি খুবই উচ্ছাসিত ছিল এবং সকলকে এই বিষয়ে সকলকে বলে বেড়াতে লাগল, যদিও যীশু তাকে এটি করার জন্য বলতেন। সেই ব্যক্তিটির জীবনে কিছু ছিল না এবং কেউ ছিল না, কিন্তু তার জীবনে তখন আকষ্মিকভাবেই আনন্দ এবং পূর্ণতা আসল। এই সাবেক সমাজচ্যুত ব্যক্তিটির জগতটা কীভাবে সার্বিকভাবে পরিবর্তিত হল? এটা হল শুধুমাত্র যীশুর সাথে একটি সংক্ষিপ্ত মিথস্ক্রিয়া।
আমাদের ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক তৈরী করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
শুধুমাত্র এটাই আমাদের একাকীত্বের থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারে কারণ আমাদেরকে এই সম্পর্কের জন্য সৃষ্ট করা হয়েছে। এটা হল সেই কুষ্ঠরোগীর সাথে যীশুর মিথষ্ক্রিয়া, যিনি ঈশ্বর হয়ে তার জীবনে পূর্ণতা, প্রশান্তি এবং আনন্দ নিয়ে এসেছিলেন যেখানে পৃথিবীর সমস্ত রত্ন, স্বর্ণ, এবং স্ত্রীলোকের প্রাচুর্যেও শলোমনের জীবনের পূর্ণতা আসে নি। ঈশ্বরের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার মাধ্যমে জীবনের সবকিছুই পরিবির্তিত হয়; আর এটাই আমাদের একাকীত্বের সমাধান।
এটা বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক থাকলে কি আমরা সারাজীবনের জন্যেই একাকীত্ব থেকে মুক্তি পাব? না। সহজভাবে বললে, এই প্রক্রিয়াটি চূর্ণ হয়েছে। এটা একটি জটিল ঘটনা আপনি এই বিষয়ে এখান, থেকে শিখতে পারবেন, কিন্তু আমাদের পৃথিবী হল একটি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা। আমরা পাপের কারণে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি, আমাদের আকাঙ্খা ঈশ্বরের থেকেও উর্ধ্বে। এই পৃথিবীতে, আমরা একাকীত্ব বা দুষ্টতা বা দু:খের কারণে আমাদের জীবন যেমন হওয়ার কথা ছিল সেই অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি না।
তো এখন কি হবে?
একজন মানুষ হিসেবে একাকী হওয়া সত্ত্বেও এর তাৎক্ষণিক কোন সামাধান নেই, কিন্তু এখানে দুটি বিষয় আপনাকে এখানে এবং এখনই সাহায্য করতে পারে:
যেহেতু আমরা সংযু্ক্ত হওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছি, সেহেতু একাকীত্বের মোকাবিলা করার একটি বড় অংশ হল সমাজ। কোন বন্ধুই আপনাকে একাকী হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে না, কিন্তু যখন আপনার আশেপাশে আপনার প্রতি যত্নশীল লোকজন থাকে যারা আপনি কে সেটাকেই প্রধান গুরুত্ব দেয় (আপনার শরীর, দক্ষতা, অর্থ, অথবা মদ পান করার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নয়) এটা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে আপনি আসলেই একা নন।
এমনকি, বিজ্ঞানও এর পক্ষে বলে যে: আপনার যত বেশি বন্ধু এবং আপনি যত বেশি অন্যের সাথে সংযু্ক্ত থাকবেন ততই আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। আপনার যা করতে হবে সেটা আপনি গুগলে অনুসন্ধান করতে পারেন যে: বন্ধুত্বের শাস্ত্র সম্বন্ধীয় উপকারসমূহ।’’ ব্রিনি ব্রাউন নামেন একজন গবেষক এবং মানুষের মিথস্ক্রিয়া বিশেষজ্ঞ এইভাবে এতে ব্যাখ্যা করে যে:‘‘আমি সংযুক্ততাকে একটি শক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করব যেটা মানুষ এবং যখন তারা অনুভব করে যে তাদেরকে দেখা হয়েছে, তাদের কথা শোনা হচ্ছে এবং তাদেরকে মূল্য দেওয়া হচ্ছে; যখন তারা কোন বিচার ছাড়াই অন্যদেরকে কোন কিছু দিতে এবং গ্রহণ করতে পারে; এবং যখন তারা সম্পর্ক থেকে উপজীবিকা এবং শক্তি অর্জন করে সেটা মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে।’’ যারা আপনাকে আপনার নিজের দৃষ্টিকোণের বাইরে চিন্তা করতে সাহায্য করার জন্য ভালবাসে এবং আপনার মনে পড়া একাকী সময়গুলোকে অর্থপূর্ণ করে তোলে তাদের সাথে আপনার জীবনের বিষয়ে শেয়ার করা উচিত।
মাঝে মাঝে শুধুমাত্র ঈশ্বরের বিশ্বাস করা আপনাকে শুক্রবার রাতে কম একাকীত্ব অনুভব করতে সাহায্য করার বিষয়টি কিছুটা সন্দেহজনিত মনে হতে পারে। কিন্তু বাইবেল বলে যে ঈশ্বর তাঁর সন্তানদেরকে কখনও ছেড়ে যান না, আর যারা তাঁর নাম স্মরণ করে তাদের প্রত্যেকের সাথেই তিনি উপস্থিত থাকেন। ঈশ্বর আপনাকে ভালবাসেন এবং আপনার সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে চান। তিনি চান যেন আপনার একাকী মুহূর্তে আপনি তাঁর সান্নিধ্যে আসেন!
শুধুমাত্র এটাই নয়, তিনি আপনাকে বোঝেন। যখন যীশু তাঁর জীবনের কঠিনতম সময় পার করছিলেন এবং ক্রুশারোপিত হতে যাচ্ছিলেন, তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ত্যাগ করেছিলেন এবং এমনকি তাঁকে না চেনার ভানও করেছেন। যীশু জানেন একজন নি:স্বঙ্গ মানুষ হয়ে কেমন অনুভূত হয়। বাইবেল বলে,‘‘ যাদের মন ভেংগে গেছে সদাপ্রভু তাদের কাছে থাকেন; যাদের অন্তর চুরমার হয়ে গেছে তিনি তাদের উদ্ধার করেন।’’ (গীতসংহিত ৩৪:১৮) আপনার গভীরতম একাকী মুহূর্তে আপনি যদি জানেন আপনি একা নন তখন আপনার কেমন লাগবে? যে ঈশ্বর আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি সর্বদাই আপনার পাশে আছেন এবং তিনি আপনাকে কখনও ছেড়ে যাবেন না!
যে পাপ আমাদেরকে একাকীত্ববিহীন জীবন-যাপন করাতে বাধ্য করছে সেই একই পাপ এখনও আমাদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। আপনি যতই ভাল মানুষ হোন না কেন বা যতই চেষ্টা করুন না কেন, আপনি নিজে এই বিচ্ছিন্নতার সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন না। ঈশ্বর যীশুকে এই পৃথিবীতে পাঠালেন যাতে আমরা ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্ক পুন:স্থাপন করতে পারি- বাইবেল বলে যে যাদের মন ভেংগে গেছে যীশু তাদের সুস্থ করবেন। যীশু, ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র, আপনার পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন যাতে আপনি কুষ্ঠরোগীর মত পরিষ্কৃত হতে পারেন; আপনি আর সমাজচ্যুত কোন ব্যক্তি নন, আপনি এখন ঈশ্বরের সন্তান। টিম কেলার নামে একজন পালক এবং লেখক বলেছেন ঈশ্বর আমাদেরকে এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন: ‘‘এই মহাবিশ্বের একমাত্র দৃষ্টি যেটা আপনাকে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে, আপনাকে আকাশের মত ভালবাসে।’’ ঈশ্বর আপনার কঠিনতম পরিস্থিতিগুলোও দেখেন এবং সকল পরিস্থিতিতেই আপনাকে একইভাবে ভালবাসেন, তিনি চান আপনি তাঁর সান্নিধ্যে আসেন।
আপনি কি ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে চান এবং তাঁকে আপনার জীবনের একাকীত্বের মুহূর্তগুলোর সময় সাহায্য করতে দিতে চান? আপনি এখনই তাঁকে বিশ্বাস করার মাধ্যমে এবং প্রার্থনার মাধ্যমে যেটি সহজভাবে বলতে গেলে ঈশ্বরের সাথে কথা বলা বোঝায় সেটার মাধ্যমে তাঁকে আপনার জীবনে গ্রহণ করতে পারেন। ঈশ্বর আপনাকে এবং আপনার অন্তর জানেন, তাই আপনার বলা কথা আপনার আচরণের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটি পরামর্শমূলক প্রার্থনা দেওয়া হল:
প্রভু যীশু, আমি তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে জানতে চাই। আমার পাপের জন্য আমার পরিবর্তে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি আমার জীবনের দরজা তোমার কাছে উন্মুক্ত করছি এবং আমি তোমাকে আমার জীবনের রক্ষাকর্তা এবং প্রভু হিসেবে আসার জন্য অনুরোধ করছি। আমার জীবনের পরিচালনাভার গ্রহণ কর। আমার পাপ ক্ষমা করা এবং আমাকে অনন্ত জীবন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার সাথে থাকা এবং তুমি আমাকে ছেড়ে কখনও যাবে না এটা বলার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। দয়া করে আমাকে তোমার উপস্থিতির মধ্যদিয়ে পূর্ণ কর।