যে কেউ যীশুর সম্বন্ধে জানতে চায় তার জন্য এটি একটি সম্মানসূচক উপস্থাপনা। এখানে কোন চ্যালেঞ্জ নেই। আর কোন ধর্মকে কোন উপায়েই সমালোচনা করা যাবে না।
এই অনুচ্ছেদ সম্পর্কে ছয়টি প্রশ্নের উত্তর নিচে উল্লেখ করা হল:
১. বাইবেল কি এর আসল সংস্করণ থেকে পরিবর্তিত হয়েছে?
২. সৃষ্টিকর্তা কী বলেছেন যে একটি ধর্ম আরেকটি ধর্মের পরিবর্তক: জুডাইজম, তারপর খ্রীষ্টিয়ানিটি, তারপর ইসলাম?
৩. সৃষ্টিকর্তার যে পুত্র আছে তা দাবি করা কি তাঁর নিন্দা করা নয়?
৪. যীশু কি সত্যিই ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছিলেন?
৫. যদি যীশু ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেই থাকেন, তিনি কি সেই ৩ দিনের জন্য ঈশ্বর ছিলেন?
৬. কেন যীশুকে একজন নবী হিসেবে দেখা হয় না?
ভূমিকা হিসেবে, এখানে বাইবেলের কিছু বিবৃতি দেয়া হল: আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আকাশ ও পৃথিবী শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না আইন-কানুনের সমস্ত কথা সফল হয় ততদিন সেই আইন-কানুনের এক বিন্দু কি এক মাত্রা মুছে যাবে না।’’১
ঈশ্বরের বাক্য কখনই মুছে যাবে না। এর সকল কিছুই একবারে শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হবে। আবারও এটি বলে যে,‘‘আকাশ ও পৃথিবীর শেষ হবে, কিন্তু আমার কথা চিরদিন থাকবে।’’২
আরও আছে, ‘‘পবিত্র শাস্ত্রের প্রত্যেকটি কথা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারী।’’৩ শাস্ত্রের প্রত্যেকটি কথাই ঈশ্বর থেকে অনুপ্রাণিত।
এবং, ‘‘ঘাস শুকিয়ে যায় আর ফুলও ঝরে পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকে।’’৪
আমাদের নিজেদেরকে এই প্রশ্ন করা দরকার,‘‘ঈশ্বর কি তাঁর নিজ বাক্য রক্ষা করতে সক্ষম? ঈশ্বর কি উপরিউল্লিখিত বিবৃতিগুলো পূর্ণ করতে সামর্থ্য যে তাঁর বাক্য কখনই মুছবে না, বা কখনই অসম্পূর্ণ থাকবে না?
ঈশ্বর কি সত্যিই পারেন? হ্যাঁ, অবশ্যই। ঈশ্বরের বাক্য সকলের জন্য। আমরা কি ঈশ্বরের ক্ষমতার উপর সন্দেহ করছি না যে তিনি এর পরিবর্তন থেকে একে রক্ষা করতে সক্ষম নন?
কোন কিছুই পরিবর্তন করা হয় নি। এটা শূধুই একটি গুজব।
বাইবেল যে পরিবর্তন করা হয়েছে তা কোরআন কখনই বলে না। শুধুই বিপরীত দিকটি। এটি তাওরাত এবং বাইবেলকে সম্মান করে। এটি তাওরাত এবং ‘‘জবুর শরীফ’’(পুরাতন নিয়ম এবং গীতসংহিতা) এবং ‘‘ইঞ্জিল’’ (নতুন নিয়ম) হিসেবে বহুবার সম্মোধন করেছে।
যীশু খ্রীষ্টের জন্মের ৬০০ বছর পরে যখন ইসলাম ৭ম শতাব্দীতে আসে তখন বাইবেল যে সত্য তা স্বীকার করা হয়।
তাই, আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন বাইবেল কি ৭ম শতাব্দী থেকে পরিবর্তিত হয়েছে? না। আপনাকে শুধু বর্তমানের বাইবেলের সাথে হাজার বছর আগের বাইবেলের তুলনা করতে হবে।
কোরআন আসার শত বছর আগেই ৩০০ অব্দে আমরা সম্পূর্ণ বাইবেল খুঁজে পাই। আপনি এই ধরনের বাইবেলগুলো লন্ডনের যাদুঘর, ভ্যাটিক্যান সিটিসহ অনেক জায়গায় খুঁজে পাবেন। আপনি যদি বর্তমানের বাইবেলের সাথে ৩০০ খ্রীষ্টাব্দের বাইবেলগুলোর তুলনা করেন, তাহলে আপনি দেখবেন যে, আজকের বাইবেলগুলোর সাথে সেই বাইবেলগুলোর হুবহু মিল রয়েছে।
আপনি কি জানেন যে নতুন নিয়মের আজ নতুন নিয়মের প্রায় ২৫০০০ হাতে-লেখা অনুলিপি রয়েছে? ইতিহাসবিদরা এই পান্ডুলিপিগুলো তুলনা করার মাধ্যমে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে আমাদের বর্তমানের যে নতুন নিয়ম রয়েছে তাঁর সাথে সেই পুরোনো নতুন নিয়মের ৯৯.৫% নির্ভুল। এর কোন পরিবর্তন করা হয় নি।
(.৫% যে পার্থক্য রয়েছে সেটা শুধু বানান পরিবর্তনের জন্য করা হয়েছে, কিন্তু এর অর্থ প্রকাশে কোন পরিবর্তন করা হয় নি।)
এছাড়াও আপনি লোহিত সাগরের সম্প্রতিককালের প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানগুলো সম্বন্ধে জেনে থাকতে পারবেন। এগুলো পাওয়া গিয়েছিল কুমরানের গুহাগুলোতে, যেটি লোহিত সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত।
গবেষকরা বর্তমানের বাইবেলের সাথে তাদের খুঁজে পাওয়া পান্ডুলিপিগুলোর তুলনা করে দেখেছেন, আর সেগুলো একইরকম, প্রায় ১০০ অভিন্ন।
কাউকে এটা বলতে দেবেন না যে নতুন নিয়ম বা বাইবেল এর আসল সংস্করণ থেকে ভিন্ন। কারণ একথা ঐতিহাসিকভাবেই সঠিক নয়।
বাইবেলকে পরিবর্তন করা হয় নি।
ঠিক আছে, কিন্তু সেই চারটি সুসমাচারের বিষয়ে কী হবে? সেগুলো কি ভিন্ন শাস্ত্র নয়, একটির থেকে অন্যটি কি আলাদা নয়?
হ্যাঁ, এখানে নতুন নিয়মে চারটি সুসমাচার রয়েছে: মথি, মার্ক, লূক এবং যোহন। এগুলো মূলত এই বিষয় দেখাতে সাহায্য করে যে বাইবেলকে কখনই কলুষিত করা হয় নি। এই চারটি হল যীশু যা বলে গেছেন, তিনি যা করে গেছেন সেগুলোর প্রমাণস্বরূপ।
কল্পনা করে দেখুন যে, যদি একজন বা দুজন, অথবা যদি বলি চার জন ব্যক্তি রাস্তার কোণায় ঘটে যাওয়া কোন গাড়ি দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আর প্রত্যেককেই তাদের দেখা অনুযায়ী, সেই গাড়ি দুর্ঘটনার বিবরণ অনুসারে আদালতে সাক্ষী দিতে বলা হয়েছে। আপনার কি মনে হয় তারা প্রত্যেকেই একই সাক্ষ্য, একই শব্দ দিয়ে সেই ঘটনা বর্ণনা করবে? অবশ্যই না। প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ দিয়ে তারা কী দেখেছে সেটাই বলবে। আর এই বিষয়টিই এই চারজন সাক্ষীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তারা প্রত্যেকেই যীশুর প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন।
বহু শতাব্দী ধরে বিচার ব্যস্থায় সাক্ষ্যপ্রথা জড়িত। আর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, একজন ব্যক্তির কথা অন্য জনের সাথে সম্পূর্ণ মিল নাও থাকতে পারে। প্রায়শই, আপনার একাধিক সাক্ষ্যের প্রয়োজন হবে। পুরাতন নিয়ম থেকে নতুন নিয়মের একটি বিবৃতি দেওয়া হল, ‘‘দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথায় এই সব বিষয় সত্যি বলে প্রমাণিত হয়।’’৫
যীশুর সুসমাচার সম্বন্ধে এই চারটি সাক্ষ্য ছাড়াও আরও অনেক সাক্ষ্য আছে। যাকোব, পৌল, যিহুদা, পিতর, এবং অন্যান্য আরও অনেকেই যারা নতুন নিয়মের বাকি পুস্তকগুলো লিখেছেন তারাও এর সাক্ষী।
যোহন বলেছেন,‘‘[আমরা লিখেছি] যাঁকে নিজেদের চোখে দেখেছি, যাঁকে নিজেদের হাতে ছুঁয়েছি।’’৬ তারা যীশুর প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন। তাই তারা যা দেখেছেন সেটাই লিখেছেন।
বাইবেল সে সকল ভাষায় লেখা হয়েছিল, যেসকল অনুবাদে লেখা হয়েছিল সেগুলোর কি হবে?
বাইবেল হিব্রæ এবং গ্রীক ভাষায় লেখা হয়েছিল। যেকোন বাইবেল, যে বছরেই সেটা ছাপানো হোক না কেন, সেগুলোর প্রত্যেকটিই আসল সংস্করণ হিব্রু এবং গ্রিক ভাষা থেকেই অনুবাদ করা হয়েছিল। (বাইবেলগুলো কখনই ইংরেজী থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করা হয় নি, উদাহরণস্বরূপ. এগুলো সবসময়ই আসল ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে।)
কিছু বাইবেল আছে যেগুলো ভাষান্তর আকারে আছে, অনুবাদ আকারে নয়। আর সেগুলোকে ভাষান্তর হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। তবে অনুবাদগুলো কেবল-মূল হিব্রæ এবং গ্রীক ভাষায় যা আছে সে অনুসারেই করা হয়।
হিব্রু এবং গ্রীক বাইবেলগুলো হাজারো ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। কেন? কারণ ঈশ্বর চান যেন এই পৃথিবীর প্রত্যেকেই পরিত্রাণের সুখবরের কথা জানতে পারে।
আর বাইবেল অনুবাদ করা কঠিন কোন কাজ নয়। বাইবেলের বেশ কিছু অংশ রয়েছে যেগুলো কাব্যিক ধারায় রচিত (হিতোপদেশ, শলোমনের পরমগীত,গীতসংহিতা)। কিন্তু বাইবেলের অন্তর্নিহিত বিষয় খুবই সহজ ভাষায় রচিত যেগুলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর অনুবাদ করা কঠিন কিছু নয়। বাইবেল হল সাবলীল, সহজবোধ্য যেটি বাইবেলে বিশ্বাস করার আরেকটি কারণ।
এখানে একটি সত্য ঘটনা দেয়া হল।
‘‘একদিন আমার ছেলে আমাকে ফোন করল। সে একটি অন্য দেশের প্রধান সড়কের মাঝখানে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। তার গাড়িটিকে অন্য একটি গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়েছিল, আর তার গাড়ি ১৮০ ডিগ্রি কোণে ঘুরতে ঘুরতে প্রধান সড়কের মাঝখানে ভুল রাস্তায় এসে পড়েছিল।
সে বলল, ‘বাবা, আমি ঠিক আছি। কিন্তু এখন আমি কি করব?’
সে বিপদে পড়েছে। তার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। তো, আপনার কি মনে হয় আমি এই পরিস্থিতিতে তাকে কাব্যিক কোন বার্তা পাঠাবো? আমি যে কবিতা পড়েছিলাম সেগুলো থেকে কোন একটা পাঠাবো? না।
এখন সেই সময় সহজেই বলতে হয়, ‘জন তোমার এটা করা দরকার। তুমি বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছ আর এর সমাধান এটা হবে।’ আর বাইবেলের অন্তর্নিহিত বিষয় এটাই।মানবজাতি সমস্যার মুখে, নরকের দিকে যাচ্ছে। কারণ সবাই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের প্রশংসা পাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আর আমাদের সহজ একটি পরিত্রাণের সুখবর প্রয়োজন। বাইবেল আমাদের বলে কীভাবে আমরা ক্ষমা পাব, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী করতে পারব যেটি এখন থেকেই শুরু হবে এবং চিরকাল স্থায়ী হবে।
ঈশ্বর কি চান যে আমরা প্রথম ইহুদি ধর্মালম্বী হই, তারপর পরিবর্তিত হয়ে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হই, তারপর আবার মুসলিম হই?
না। ঈশ্বর তাঁর কাজে অটল। তিনি কোন ধর্ম সৃষ্টিতে কখনই আগ্রহী নন।
অব্রাহাম থেকে শুরু করে, ঈশ্বর তাঁর নিজেকে প্রকাশের ক্ষেত্রে খুবই স্পষ্ট ছিলেন যাতে করে আমরা তাঁর সাথ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি। এমন একটি সম্পর্ক, যাতে কোন ধর্ম না, কিন্তু আমাদেরকে সৃষ্টি করার প্রধান উদ্দেশ্য যাতে বাস্তবায়িত হয়।
আসুন, সৃষ্টির শুরুতে, আদম ও হবার দিকে ফিরে দেখা যাক। ঈশ্বরের সাথে তাদের সরাসরি সম্পর্ক ছিল, এবং তাদের প্রয়োজনীয় সকল কিছুই দেওয়া হত।
কিন্তু তারপর শয়তান আদম ও হবাকে সাপের আকারে দেখা দিল, এবং তাদেরকে প্রলোভিত করল। দুর্ভাগ্যবশত তারা শয়তানকেই বিশ্বাস করল এবং ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করল। এর ফলে, আদম ও হবা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক থেকে দূরে সরে গেল।
কিন্তু আপনি কি জানেন ঈশ্বর সেই মুহূর্তে শয়তানকে কি বলেছিল? ঈশ্বর বলেছিলেন যে স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে আসা সন্তান শয়তানের শত্রু হবে। ঈশ্বর বলেছেন শয়তান সেই সন্তানের পায়ের গোড়ালীতে ছোবল মারবে এবং আংশিক বিজয়ী হবে। কিন্তু সেই সন্তান তাঁর মাথা পিষে দিয়ে চূড়ান্ত আঘাত করবে।
এর মূল বিষয়টি নিম্নরূপ:
‘‘তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর সেই সাপকে বললেন, “তোমার এই কাজের জন্য ভূমির সমস্ত গৃহপালিত আর বন্য প্রাণীদের মধ্যে তুমি সবচেয়ে বেশী অভিশপ্ত। তুমি সারা জীবন পেটের উপর ভর করে চলবে এবং ধুলা খাবে। আমি তোমার ও স্ত্রীলোকের মধ্যে এবং তোমার বংশ ও স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে আসা বংশের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করব। সেই বংশের একজন তোমার মাথা পিষে দেবে আর তুমি তার পায়ের গোড়ালীতে ছোবল মারবে।”৭
শয়তান সেই স্ত্রীলোকের বংশধরের গোড়ালীতে আঘাত করে সীমিত সময়ের জন্য জয়লাভ করবে।
পুরো ইতিহাসজুড়ে, কোন ব্যক্তি কোন পুরুষ এবং নারী উভয় থেকে না এসে শুধুমাত্র নারীর থেকে এসেছেন? যীশু, মরিয়মের ছেলে, তাই না?
শয়তান সেই নারীর বংশের একজনকে তাঁর গোড়ালীতে আঘাত করবে। কিন্তু সেই বংশধর শয়তানের মাথা পিষে দেবে।
এর অর্থ কি? এর শুধুমাত্র একটি ব্যাখ্যাই আছে।
যখন যীশুর হাতে ও পায়ে পেরেকে গাঁথা ছিল তখন শয়তান তাঁকে আঘাত করেছিল।
কিন্তু যীশু শয়তানকে চরম আঘাত করলেন। ক্রুশে যীশু শয়তানকে হারিয়ে দিলেন। তিনি সমস্ত মানবজাতির জন্য ক্রুশে প্রাণ দিলেন, তিনি সকলকে ক্ষমা করতে চান, এবং ঈশ্বরের সাথে পুনরায়
সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি নতুন পথ খুলে দিয়েছেন।
যিশাইয় ভাববাদী এই বংশধরের বিষয়ে লিখেছেন:
‘‘তাঁর এমন সৌন্দর্য বা জাঁকজমক নেই যে, তাঁর দিকে আমরা ফিরে তাকাই; তাঁর চেহারাও এমন নয় যে, আমাদের আকর্ষণ করতে পারে। লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে ও অগ্রাহ্য করেছে; তিনি যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং রোগের সংগে তাঁর পরিচয় ছিল।
লোকে যাকে দেখলে মুখ ফিরায় তিনি তার মত হয়েছেন; লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে এবং আমরা তাঁকে সম্মান করি নি।
সত্যি, তিনিই আমাদের সব রোগ তুলে নিয়েছেন আর আমাদের যন্ত্রণা বহন করেছেন; কিন্তু আমরা ভেবেছি ঈশ্বর তাঁকে আঘাত করেছেন, তাঁকে মেরেছেন ও কষ্ট দিয়েছেন।
আমাদের পাপের জন্যই তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে; আমাদের অন্যায়ের জন্য তাঁকে চুরমার করা হয়েছে। যে শাস্তির ফলে আমাদের শাস্তি এসেছে সেই শাস্তি তাঁকেই দেওয়া হয়েছে; তিনি যে আঘাত পেয়েছেন তার দ্বারাই আমরা সুস্থ হয়েছি।
আমরা সবাই ভেড়ার মত করে বিপথে গিয়েছি; আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের পথের দিকে ফিরেছি। সদাপ্রভু আমাদের সকলের অন্যায় তাঁর উপর চাপিয়েছেন।’’৮
যিশাইয় ভাববাদী কার সম্বন্ধে কথা বলছেন? এটা বেশ স্পষ্ট। তিনি যীশুর সম্বন্ধে কথা বলছেন। আর এটা কখন লেখা হয়েছিল? এটা লেখা হয়েছিল যীশুর জন্মের প্রায় ৭০০ বছর আগে।
সৃষ্টির শুরু থেকেই, হাজার হাজার বছর ধরে, ঈশ্বর সবসময়ই যীশুর আসার সম্বন্ধে এবং তাঁর মৃত্যুবরণ সম্পর্কে বলেছেন , যেমনটা আমরা যিশাইয় ভাববাদীর লেখা থেকে পড়লাম। আপনার কী মনে হয়, ঈশ্বর যদি একদম শেষ পরিস্থিতিতে তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেন তাহলে কেমন হতো? হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিজ্ঞাত যীশুর আসার পর ঈশ্বর যদি তাঁর ভাবনা পরিবর্তন করতেন আর যীশু আমাদের জন্য না মারা যেতেন তাহলে কেমন হতো? ঈশ্বর তাঁর ভাবনা পরিবর্তন করেন না।
ঈশ্বর হলেন আত্না। আর আত্নিক দৃষ্টিতে যীশু হলেন ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র, শারীরিক দৃষ্টিতে নয়।
যদি কেউ বলে,‘‘আপনিই সিডারসের ছেলে’’ এর মানে হল সেই ব্যক্তি লেবানন থেকে এসেছেন। অথবা, যদি মিশরের বলা হয় তাহলে, ‘‘ ‘‘আপনিই নাইলির ছেলে।’’ যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলার মানে হল যীশু ঈশ্বর থেকে এসেছেন। এটি একটি শিরোনামের মত। যখন স্বর্গদূত মরিয়মের কাছে এসে বললেন, ‘‘পবিত্র আত্না তোমার উপর তোমার উপর আসবেন আর তাকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে।’’ একটি শিরোনাম। খ্রীষ্টিয়নরা এটা বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বরের সাথে কোন নারীর শারীরিক সম্পর্ক থাকতে পারে।
যিশাইয় বলেছেন, ‘‘এই সমস্ত হবে, কারণ একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন, একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে। শাসন করবার ভার তাঁর কাঁধের উপর থাকবে, আর তাঁর নাম হবে আশ্চর্য পরামর্শদাতা, শক্তিশালী ঈশ্বর, চিরস্থায়ী পিতা, শান্তির রাজা।’’৯
তিনিই ঈশ্বর, যিনি মরিয়মের মধ্যদিয়ে মানুষরূপে আসলেন। তিনি একই সাথে ঈশ্বর এবং পুত্র, যে কুমারী মরিয়মের গর্ভে এসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
আপনি কেন মনে করেন ঈশ্বর যীশুকে কুমারী মরিয়মের গর্ভে জন্মগ্রহণ করতে দিলেন?
কোন নারী এবং পুরুষ থেকে জন্ম না নিয়ে তিনি শুধু নারীর মধ্য থেকে জন্মগ্রহণ করার মানে হল তিনি আদম ও হবার পাপস্বভাবটি পান নি। যখন আদম এবং হবা পাপে পতিত হল, তখন তারা তাদের পাপ পূর্ণ স্বভাব বংশের পর বংশ ধরে, তাদের নিজেদের সন্তানাদির চলমান ছিল আর এখন তা আমাদের মধ্যেও আছে।
আমরা জন্মগতভাবে সবাই পাপী। আমাদের সকলেরই জন্মগতভাবে সব কিছু ঈশ্বরের চাওয়া অনুযায়ী না করে নিজেদের মত করে করার প্রবণতা রয়েছে। আমরা সকলেই পাপ করি। এজন্য ভাববাদী দায়ূদ কেঁদে বলেছেন, ‘‘ হ্যাঁ, জন্ম থেকেই আমি অন্যায়ের মধ্যে আছি; পাপের অবস্থাতেই আমি মায়ের গর্ভে ছিলাম।’’ আমরা সকলেই জন্মগতভাবে পাপী। আমরা পাপী হিসেবেই বেঁচে আছি আর এজন্য আমাদের সকলেরই একজন মুক্তিদাতা প্রয়োজন।
কিন্তু আমাদেরকে মুক্ত করার জন্য তাঁর ভিন্ন একটি স্বত্ত্বার প্রয়োজন ছিল। তাঁর ঈশ্বরের আত্না, পবিত্র আত্না, নিষ্পাপ হওয়ার প্রয়োজন ছিল। যিশাইয় বলেছেন,‘‘ তাঁর মধ্যে কোন পাপ ছিল না।’’ কোন পাপ তাঁর মধ্যে ছিল না।
শাস্ত্র্রে, ঈশ্বর মোশীর কাছে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য জ¦লন্ত ঝোপের ব্যবহার করেছিলেন। তিনি অব্রাহামের সাথে কথা বলবার সময় স্বর্গের কন্ঠস্বর ব্যবহার করেছিলেন। তাহলে কার এই প্রশ্ন করার সাহস হয় যে ঈশ্বর নিজেকে আমাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য মনুষ্যরূপ ধারণ করতে পারবে না?
কীভাবে ঈশ্বর অব্রাহামকে পরীক্ষা করেছিলেন? তিনি অব্রহামকে তাঁর ছেলেকে বেদির ওপরে শোয়াতে বললেন। যখন তারা পাহাড় বেয়ে উঠছিলেন, তখন তার ছেলে তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘‘ পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য কাঠ আর আগুন রয়েছে দেখছি, কিন্তু ভেড়ার বাচ্চা কোথায়?’’ অব্রাহাম উত্তর দিলেন, ‘‘ পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য ঈশ্বর নিজেই ভেড়ার বাচ্চা যুগিয়ে দেবেন।’’ আর ঈশ্বর সেখানে মেষশাবক জুগিয়ে দিলেন, যেটি অব্রাহাম ঈশ্বরের উদ্দেশ্য বলি দিলেন।
ঈশ্বর আমাদেরকে যে অনবরত বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন সেদিকে লক্ষ্য করুন।
ঈশ্বর রক্ষাকারী, তিনি একটি মেষশাবক অব্রাহামের ছেলেকে দিয়ে রক্ষা করলেন।
তারপর আমরা যাত্রাপুস্তকে, একটি মেষশাবকের গুরুত্ব বুঝতে পারি। যাত্রাপুস্তকে, ঈশ্বর তাঁর লোকদেরকে মিশরে থাকাকালীন সময়ে সতর্ক করেছিলেন যে তিনি মিশরীয়দের উপর তার ক্রোধ প্রকাশ করবেন। যদি কেউ ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয় তাহলে তারা তাদের দরজার চৌকাঠের দুপাশে একটি মেষশাবকের রক্ত লাগিয়ে রাখবে, ঈশ্বর মৃত্যুর স্বর্গদূতকে সেই দরজা এড়িয়ে যেতে বলবেন। বিশ্বাসী একটি জাতি একটি মেষশাবক দ্বারা রক্ষা পেল।তারপর আমরা আবারও লেবীয়পুস্তকে একটি মেষশাবকের উল্লেখ পাই। প্রতিবছর পুরোহিতকে শহর থেকে একটি মেষশাবককে বাছাই করে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী তাদের পাপের ক্ষমার জন্য উৎসর্গ করতে হতো। প্রতি বছরই একেক জন্য লোক একটি মেষশাবকের দ্বারা রক্ষা পেত।
তারপর আমরা শুনি যোহন বাপ্তাইজকের লোকদের কাছে ঘোষণা করে বলতে: ‘‘ঐ দেখ ঈশ্বরের মেষ-শিশু, যিনি মানুষের সমস্ত পাপ দূর করেন।’’১০ একটি মেষ-শাবক, যিনি সারা জগতকে এবং যারা তাঁকে বিশ্বাস করে তাদের প্রত্যেককে রক্ষা করবেন।
যদি অব্রাহাম ঈশ্বরের রবে সাড়া না দিত বা তাঁর সাথে যেই ঈশ্বর কথা বলছিলেন সেই ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করত তাহলে কী হতো? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, তাঁর ছেলে সেখানে মারা যেত!
লোকেরা যদি ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করত এবং তাদের দরজার চৌকাঠে মেষশাবকের রক্ত না লাগাত তাহলে কী হতো?
তাহলে এখনই মূল প্রশ্ন। এই ২০০০ বছর আগে, যীশু , যিনি ঈশ্বরের মেষশাবক, তিনি ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আপনার জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমাদেরকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,‘‘ কিন্তু ঈশ্বর যে আমাদের ভালবাসেন তার প্রমাণ এই যে, আমরা পাপী থাকতেই খ্রীষ্ট আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন।’’১১
যদি আপনি বলতেন,‘‘ না, তারা তাঁকে ক্রুশে দেয় নি, তিনি মারা যান নি।’’ তাহলে কেমন হতো? ঈশ্বরের মেষশাবক আপনার পাপের জন্য, এবং এ জগতের সকল পাপের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। আপনি যদি বলেন যে তাঁকে মারা হয় নি, অর্থাৎ ঈশ্বরের মেষশাবক আপনার পাপ এবং আপনাকে ক্ষমা করার জন্য মারা যায় নি তাহলে কি হবে?
চমৎকার একটি প্রশ্ন। এর উত্তরের জন্য একটি ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে।
ধরা যাক, আমদের একটি ফুলদানি আছে। এর মধ্যে কোন ফুল বা কোন জল নেই। এটি বাতাসে পূর্ণ। ফুলদানির বাইরের বায়ুচাপ এবং ভেতরের বায়ুচাপের মধ্যে কি পার্থক্য রয়েছে? ভেতরের বায়ুচাপের আকার আছে, তাই না? এখানে একই বাতাস, কিন্তু ফুলদানির ভেতরের বায়ুচাপের আকার রয়েছে।
যদি আমরা এই ফুলদানিটি নিয়ে দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে ভেঙ্গে ফেলি তাহলে এর ভেতরের বায়ুচাপের কি হবে? এটা কি মারা যাবে? না, এটা মরতে পারে না। ফুলদানিটি ভেঙ্গে হাজারও টুকরায় পরিণত হলেও ভেতরের বাতাসের আকারহীন হওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।
যীশু যখন ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তখন তাঁর শরীরের মৃত্যু ঘটেছে, কিন্তু যীশুর আত্নার কিছুই হয় নি, ঈশ্বরের আত্নার কখনই মারা যায় না। ঈশ্বর, যীশুর মাধ্যমে মানুষের আকার নিয়েছিলেন। তিনি মানুষের আকার নিয়েছিলেন, কিন্তু যীশু শুধুমাত্র মানুষই ছিলেন না।
ক্রুশে, যীশু আমাদের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তাঁর ও আমাদের মধ্যাকার দেয়ালকে সরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর কারণে আমরা ঈশ্বরের সাথে শান্তিতে থাকতে পারব। আমাদের পাপ থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বরের পূর্ণ সুবিচার যীশুর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে, যিনি ঈশ্বরের মেষশাবক হয়ে আমাদের জন্য মরেছেন। আর আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসার সম্পূর্ণ প্রকাশ যীশুর স্বেচ্ছায় তাঁর জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
আপনি হয়ত বলতে পারেন ,‘‘এটা ঠিক নয়।’’ আর আপনি ঠিক বলেছেন। যীশু আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করুক আমরা এর যোগ্য নই। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের জন্য এই সমাধানই পরিকল্পনা করে রেখেছেন। আমরা কি ঈশ্বরকে বলব কোনভাবে কি করা উচিত?
আরও একটি ঘটনা। একটি সত্য ঘটনা, যেটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে যীশু আমাদের জন্য কী করেছেন।একজন ধার্মিক বিচারক ছিলেন যিনি পক্ষপাতিত্বহীন ভাবে বিচারকাজ করতেন। তিনি ন্যায়পরায়ণ ছিলেন।একজন মহিলাকে ধরে তার কাছে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে সেই মহিলাটির শাস্তি হল যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে অথবা বিশাল অঙ্কের টাকা দিতে হবে যেটি তার কাছে ছিল না।
সেই বিচারক তাকে জিজ্ঞেস করলেন,‘‘তুমি কি দোষী?’’
আর সে কান্নার সুরে উত্তর দিল,‘‘মহামান্য, আমি যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করতে পারব না। আমি টাকাও পরিশোধ করতে পারব না। অনুগ্রহ করে আমার প্রতি দয়া করুণা করুন।’’
বিচারক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, ‘তুমি কি দোষী নাকি দোষী নও? স্বীকার কর?’’’
শেষ পর্যায়ে সেই যুবতী মহিলাটি উত্তর দিল,‘‘হ্যাঁ, মহামান্য, আমি দোষী।’’
বিচারক বললেন,‘‘তাহলে তোমার এই শাস্তি ভোগ করতেই হবে। যাবজ্জীবন অথবা এই অঙ্কের টাকা।’’ আর তারপর তিনি সেই মামলাটি বন্ধ করে দিলেন।
সেই মহিলাটি চিৎকার এবং হাহাকার করতে লাগল, আর তারা তাকে বিচারকক্ষ থেকে জেলখানায় নিয়ে গেল। বিচারক তাঁর গাউন খুলে ফেললেন, এবং কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলেন। তিনি কোষাগারের দিকে হাঁটতে লাগলেন। আর কোষাগারের ওখানে তিনি তাঁর সব টাকা মহিলাটির মুক্তিপণ হিসেবে সেখানে দিয়ে দিলেন। কেন? কারণ তিনি সেই মেয়েটিকে খুব ভালবাসতেন। সেই মেয়েটি ছিল তার নিজেই মেয়ে। আর তিনি তার সর্বস্ব দিয়ে নিজের মেয়েকে মুক্ত করলেন।
যখন বিচারক তার গাউন খুলে ফেললেন, তিনি একজন সাধারণ মানুষ হয়ে উঠলেন। আর এটাই যীশু করেছিলেন। তিনি স্বর্গ থেকে নেমে এসে তার গৌরবের গাউন খুলে ফেললেন, আর সাধারণ একজন মানুষের রূপ ধারণ করলেন। আার তিনি আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন, এতে আমাদের পাপ আর আমাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করবে না এবং আমরা চিরকালের জন্য আমাদের অনন্তকালীন ঈশ্বরের সাথে এক থাকব।
সকল ভাববাদীরা বলেছেন যে যীশু আসবেন এবং জগতের সকল পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করবেন। মানবজাতির অনন্ত জীবনের জন্য যীশুই একমাত্র আশা।
আদম ও হবার সৃষ্টির শুরুর দিকে ফিরে দেখলে আমরা দেখি, ঈশ্বর শয়তানকে বলেছিলেন নারীর বংশ থেকে একজন শয়তানের মাথা পিষে ফেলবে, এবং মানবজাতি মুক্তি পাবে। যীশুর মৃত্যু এবং পুনরুত্থান শয়তানের শক্তিকে পরাজিত করেছে। যীশু শয়তানের মাথা পিষে ফেলার মধ্য দিয়ে পাপ, মৃত্যু এবং ঈশ্বরের সাথে আমাদের দূরত্বকে সরিয়ে দিয়েছেন।
শুধুমাত্র একজন ঈশ্বর আছেন। ঈশ্বর সম্বন্ধে আমরা এই সত্যগুলো জানি:
ঈশ্বর চিরন্তন- তিনি সব সময়ই ছিলেন, এখন আছেন, এবং সর্বদাই থাকবেন।
ঈশ্বর পবিত্র- তাঁর কোন পাপ নেই, তিনি একদম নিখুঁত।
তিনিই সত্য- তাঁর কথা সর্বদাই স্থায়ী, অপরিবর্তনীয়, তাঁর কথা বিশ্বাসযোগ্যভাবে সত্য।
ঈশ্বর সবখানেই উপস্থিত আছেন- সব জায়গায়, সকল সময়েই তিনি উপস্থিত আছেন।
ঈশ্বর শক্তিশালী- তাঁর শক্তির কোন সীমা নেই।
ঈশ্বর সর্ব-জ্ঞানী- তাঁর সকল কিছুর পূর্ণ জ্ঞান আছে, সর্বদাই আছে।
ঈশ্বরই সৃষ্টিকর্তা- এমন কিছু নেই যা তাঁর দ্বারা তৈরী হয় নি।
শুধুমাত্র একজন ঈশ্বর আছেন। আর উপরের সকল কিছুই তাঁর সত্যতা প্রকাশ করে। আমরা এটা জানি কারণ শাস্ত্র একে ঈশ্বরর সত্যতা হিসেবে প্রকাশ করে। তিনি মানবজাতির কাছে নিজেকে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমাদের কাছে তাঁর এই বিষয়ে প্রকাশ করতে।
শাস্ত্র আমাদেরকে এটাও বলে যে ঈশ্বরের সব বৈশিষ্ট্যই যীশুর মধ্যে বিদ্যমান। ঈশ্বরের আত্নার যেমন বৈশিষ্ট্য থাকে তেমন। উদাহরণস্বরূপ, অনন্তকালকে ধরা যাক।
শাস্ত্র যীশু সম্পর্কে এটা বলে যে,‘‘ আর প্রথমেই তিনি ঈশ্বরের সংগে ছিলেন।সব কিছুই সেই বাক্যের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল, আর যা কিছু সৃষ্ট হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কোন কিছুই তাঁকে ছাড়া সৃষ্ট হয় নি।’’১২
আরও আছে‘‘ এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য ঈশ্বরের হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান,কারণ আকাশে ও পৃথিবীতে, যা দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, সব কিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। মহাকাশে যাদের হাতে রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতা রয়েছে তাদের সবাইকে তাঁকে দিয়ে তাঁরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।তিনিই সব কিছুর আগে ছিলেন এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে সব কিছু টিকে আছে।১৩
কিন্তু, যদি একজন ঈশ্বরই থেকে থাকেন, তাহলে যীশুও কীভাবে ঈশ্বর হন?
পৃথিবীতে, আমরা একটি ত্রিমাত্রিক জগতে বাস করি। এখানে প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচ্চতা, ব্যাস এবং গভীরতা রয়েছে। দুজন ব্যক্তি হয়ত দেখতে কিছুটা এক হতে পারে। তাদের হয়ত একই বিষয়ে আগ্রহ, একই পেশা থাকতে পারে। কিন্তু কোন ব্যক্তি আসলে অন্য ব্যক্তির মত হতে পারে না। তারা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ব্যক্তি।
তবে, ঈশ্বর ত্রিমাত্রিক মহাবিশ্বের কোন সীমাবদ্ধতা ছাড়াই আছেন। তিনি হলেন আত্না। আর তিনি আমাদের থেকে অসীম জটিল। এই কারণে পুত্র যীশু তাঁর পিতার থেকে আলাদা হতে পারেন। কিন্তু তবুও তারা এক।
বাইবেল আমাদের স্পষ্টভাবে বলে যে: ঈশ্বরই পুত্র, ঈশ্বরই পিতা, এবং ঈশ্বরই পবিত্র আত্না। কিন্তু এটা আমাদেরকে স্পষ্টভাবে এটাও বলে যে শুধুমাত্র একজন ঈশ্বর আছেন। যদি আমাদের এ বিষয়ে গণিত করতে বলা হয়ে, এটা কখনই, ১+১+১=৩ হবে না। এটা হবে ১x১x১=৩। ঈশ্বর একজনই।
যখন যিশাইয় বলেছেন,‘‘ কাজেই প্রভু নিজেই তোমাদের কাছে একটা চিহ্ন দেখাবেন। তা হল, একজন কুমারী মেয়ে গর্ভবতী হবে, আর তাঁর একটি ছেলে হবে; তাঁর নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল।’’১৪ ইম্মানূয়েল এর অর্থ হল ‘‘আমাদের সহিত ঈশ্বর।’’
যীশু বলেছেন তাঁকে জানার মানেই হল ঈশ্বরকে জানা। তাঁকে দেখা মানেই ঈশ্বরকে দেখা। তাঁকে বিশ্বাস করার মানেই হল ঈশ্বরে বিশ্বাস করা।
যীশুর জীবন সম্বন্ধে আরও জানতে এবং কীভাবে তিনি তাঁর কথাগুলো পূর্ণ করেছেন সেগুলো দেখার জন্য, দয়া করে এই প্রবন্ধটি দেখুন ‘‘অন্ধবিশ্বাসের উপরে’’।
তবে, ঈশ্বর সম্পর্কে আপনার আরও কিছু জানা দরকার। তিনি আপনাকে ভালবাসেন এবং আপনার যত্ন নেন।
যীশু আমাদের বলেন,‘‘ পিতা যেমন আমাকে ভালবেসেছেন আমিও তেমনি তোমাদের ভালবেসেছি। আমার ভালবাসার মধ্যে থাক।আমি আমার পিতার সমস্ত আদেশ পালন করে যেমন তাঁর ভালবাসার মধ্যে রয়েছি, তেমনি তোমরাও যদি আমার আদেশ পালন কর তবে তোমরাও আমার ভালবাসার মধ্যে থাকবে।“এই সব কথা আমি তোমাদের বললাম যেন আমার আনন্দ তোমাদের অন্তরে থাকে ও তোমাদের আনন্দ পূর্ণ হয়।’’১৫
যীশু আমাদের এই বলে আমন্ত্রণ জানান,‘‘ “তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব। আমার জোয়াল তোমাদের উপর তুলে নাও ও আমার কাছ থেকে শেখো, কারণ আমার স্বভাব নরম ও নম্র।এতে তোমরা অন্তরে বিশ্রাম পাবে, কারণ আমার জোয়াল বয়ে নেওয়া সহজ ও আমার বোঝা হালকা।”১৬
ঈশ্বরের পক্ষে সকল সংগ্রাম যথেষ্ট... যীশু আমাদেরকে নতুন এক স্বাধীনতা দিতে চান। আমরা তাঁর ভালবাসার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাব, এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা নতুন এক অনুপ্রেরণা পাব। এটা ভয় থেকে নয়, কিন্তু তাঁকে জানার আনন্দ থেকে আসবে।
যীশুর একজন অনুসারী, পৌল, এর অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন এবং তিনি বলেছেন:
‘‘ আমি এই কথা ভাল করেই জানি, মৃত্যু বা জীবন, স্বর্গদূত বা শয়তানের দূত, বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোন কিছু কিম্বা অন্য কোন রকম শক্তি,অথবা আকাশের উপরের বা পৃথিবীর নীচের কোন কিছু, এমন কি, সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে কোন ব্যাপারই ঈশ্বরের ভালবাসা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দিতে পারবে না। ঈশ্বরের এই ভালবাসা আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর মধ্যে রয়েছে।’’১৭
যীশু আপনার কাছ থেকে কী চাচ্ছেন সেটা যদি আপনি বুঝতে চান, তাহলে দয়া করে ‘‘অন্ধবিশ্বাসের উপরে’’ দেখুন।
► | কিভাবে ঈশ্বরের সাথে একটা সম্পর্ক শুরু করেন |
► | আমার একটি প্রশ্ন বা মন্তব্য আছে… |
পাদটিকা: (১) মথি ৫:১৮ (২) মথি ২৪:৩৫ (৩) ২য় তিমথীয় ৩:১৬ (৪) যিশাইয় ৪০:৮ (৫) ২য় করিন্থীয় ১৩:১ (৬) ১ম যোহন ১:১ (৭) আদিপুস্তক ৩:১৪,১৫ (৮) যিশাইয় ৫৩:১-৬ (৯) যিশাইয় ৯:৬ (১০) যোহন ১:২৯ (১১) রোমীয় ৫:৮ (১২) যোহন ১:২,৩ (১৩) কলসীয় ১:১৫,১৬ (১৪) যিশাইয় ৭:১৪ (১৫) যোহন ১৫:৯-১১ (১৬) মথি ১১:২৮-৩০ (১৭) রোমীয় ৮:৩৮,৩৯