মেরিলিয়ান এডামসন এর লেখা
ঈশ্বরের অস্তিত্ব যে আছে তা কাউকে প্রমাণ করার জন্য আপনি কি একবারও তাকে ভালবাসবেন না? কোন জোরাজুরি নেই। এমন নয় যে “আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে”। ঈশ্বরের অস্তিত্ব যে আছে তা প্রমাণ করার জন্য এখানে কয়েকটি সাধারণ প্রচেষ্টা দেখানো হল।
কিন্তু প্রথমে এটি বিবেচনা করুন। যখন ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনার বিষয় আসে, বাইবেল বলে যে অনেক লোক আছেন যারা যথেষ্ট প্রমাণ দেখেছেন কিন্তু ঈশ্বরের সত্যকে দমন করে বা চাপা দিয়ে রেখেছেন।১ অন্যদিকে, যারা তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে চায় তাদের জন্য তিনি বলেছেন, “তোমরা আমায় ডাকবে এবং আমি তোমাদের কথা শুনবো; যখন তোমরা আমাকে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী হবে তখন আমাকে জানতে পারবে।”২ আশেপাশের বিষয়গুলোর মধ্যে তাঁর অস্তিত্ব খোঁজার আগে, নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, যদি ঈশ্বর সত্যিই থাকেন তাহলে আমি কি তাঁকে জানতে চাই? তাহলে এখানে আপনার জন্য কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হল যা আপনি বিবেচনা করতে পারেন…
ঈশ্বরের নকশার অনেক উদাহরণই দেখানো যেতে পারে, আর তা কখনই শেষ হবেনা। কিন্তু তারপরেও কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
পৃথিবী...যার আকার একেবারে সঠিক। পৃথিবীর আকার এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গ্রাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের সমন্বয়ে একটি পাতলা আবরণ দিয়ে জড়ানো যা পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগ থেকে মাত্র 50 মাইল বিস্তৃত। যদি পৃথিবীর আকার ছোট হত, তাহলে এর আবহাওয়া এমন হতো যে জীবনধারণ সম্ভব ছিল না ঠিক মারকিউরি গ্রহের মত। আবার পৃথিবীর আকার যদি বড় হত, তাহলে এর আবহাওয়ার মধ্যে অনেক বেশি হাইড্রোজেন থাকতো যেমনটি জুপিটার গ্রহে আছে।৩ পৃথিবী হচ্ছে এমন একটি গ্রহ যার আবহাওয়া যেকোন ধরনের গাছপালা, পশুপাখী এবং মানুষের জীবন ধারণের জন্য একেবারে উপযুক্ত।
সূর্য থেকে পৃথিবীর অবস্থান একদম সঠিক। আমরা যে তাপমাত্রার মধ্যে আছি তা বিবেচনা করুন, মোটামুটি তা -৩০ ডিগ্রি থেকে +১২০ ডিগ্রি। যদি পৃথিবীর অবস্থান সূর্য থেকে আরো দূরে থাকতো, তাহলে আমরা সবাই জমাট বেঁধে যেতাম। যদি আর একটু কাছে হত তাহলে পুড়ে যেতাম। এমন কি সামান্যতম একটু দূরত্বেরতারতম্য ঘটলেই পৃথিবীতে জীবন ধারণ একেবারে অসম্ভব হয়ে যেত। পৃথিবী যখন প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৬৭০০০ মাইল গতিতে ঘুরতে থাকে তখনও সূর্য থেকে পৃথিবী তার সঠিক দূরত্ব বজায় রাখে। এমনকি এটি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথেই ঘুরতে থাকে এবং সমস্ত পৃথিবীকে প্রত্যেকদিন সঠিকভাবে গরম ও ঠান্ডা রাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এবং চাঁদও সঠিক আকারের এবং পৃথিবী থেকে মাধ্যাকর্ষণ টানের জন্য সঠিক দূরত্বে অবস্থান করছে। সমুদ্রের স্রোত নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রেও চাঁদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যার জন্য সমুদ্রের স্রোত কখনো থেমে থাকে না, এবং এমনকি মহাসমুদ্রের স্রোতের দ্বারা সমস্ত কিছুকে তছনছ করা থেকেও রক্ষা করে থাকে।৪
পানি...রংহীন, গন্ধহীন এবং স্বাদহীন, এমনকি কোন জীবন্ত প্রাণীই এটিকে ছাড়া বাঁচতে পারে না। গাছপালা, পশুপাখী এবং মানুষের বেশিরভাগই পানি দিয়ে পূর্ণ (মানুষের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে পানি)। আপনি দেখতে পাবেন যে কেন পানির বৈশিষ্ট্য অসাধারণভাবে জীবনের সাথে মিশ্রিত/উপযুক্ত:
পানির হিমাঙ্ক বা বরফের তাপমাত্রা ও সিদ্ধ হওয়ার তাপমাত্রার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। পানি আমাদেরকে এমন একটি পরিবেশে বাঁচিয়ে রাখে যেখানে তাপমাত্রা উঠানামা করলেও আমাদের শরীরের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট স্তর যেমন ৯৮.৬ তাপমাত্রায় থাকে।
পানি একটি সার্বজনীন দ্রাবক যা বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণে তৈরী। পানির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল, মিনারেল এবং পুষ্টিগুণ রয়েছে যা পানির মধ্যে দিয়ে আমাদের শরীরে বাহিত হচ্ছে এবং আমাদের ক্ষুদ্রতম রক্তনালীর মধ্যেও বিদ্যমান।৫
পানিও রাসায়নিকভাবে নিরপেক্ষ। এর মধ্যে যে উপাদানগুলো আছে তার সাথে যদি কোন রকম নাড়াচাড়া না করা হয় তাহলে পানির মধ্যে যে খাবার, ঔষধ এবং মিনারেল আছে তা শরীর শোষণ করতে সক্ষম।
জলের একটি অনন্য পৃষ্ঠের টান রয়েছে। তাই গাছের ক্ষেত্রে পানি মহাকর্ষের বিপরীতেও প্রবাহিত হতে পারে এমনকি সবচেয়ে লম্বা গাছেও পানি পুষ্টি নিয়ে গাছের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে।
পানির উপরের অংশে বরফ জমা হয় এবং তা ভাসতে থাকে বিধায় শীতের মধ্যেও মাছেরা বেঁচে থাকতে পারে।
পৃথিবীর সাতানব্বইভাগ পানিই সমুদ্রে রয়েছে। কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন একটি পদ্ধতি রয়েছে যার দরুন পানি থেকে লবণদূর হয়ে গিয়ে সমস্ত পৃথিবীতে সেই পানি ছড়িয়ে পড়ছে। সমুদ্রের পানি বাষ্পায়িত হয়ে লবণ থেকে আলাদা হয়ে মেঘের আকার ধারণ করে যা সহজেই বাতাসে উঠে গিয়ে ভূমির উপরে পানি আকারে পতিত হয়ে ফসল ফলাতে, পশুপাখী ও মানুষের জীবন ধারণে সাহায্য করে। এটি হচ্ছে পানি পরিশুদ্ধকরণ ও সরবরাহের একটি প্রক্রিয়া যার ফলে এই পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব টিকে আছে। আর এটি হচ্ছে পানির পুন:ব্যবহারের একটি প্রক্রিয়া।৬
মানুষের মস্তিস্ক...একসাথে অনেক তথ্য ধারণ করতে পারে। আপনার মস্তিস্ক আপনি যে রং ও বস্তু দেখেন, চারিপাশের যে তাপমাত্রায় আপনি থাকেন, মেঝেতে যে চাপ আপনি প্রয়োগ করছেন, চারিপাশের যে শব্দ আপনি শুনছেন, মুখের যে শুষ্কতা আপনার রয়েছে, এমনকি আপনার কিবোর্ডের যে গঠন বিন্যাস সবকিছুই ধারণ করতে পারে। আপনার মস্তিস্ক আপনার সমস্ত আবেগ, চিন্তা ও স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখতে ও সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। একই সাথে আপনার মস্তিস্ক আপনার শরীরের বিভিন্ন কার্যাবলীকে সচল রাখে যেমন আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণ, চোখের পাতা নড়ানো, ক্ষুধা এবং হাতের মাংসপেশীর নড়াচড়া ইত্যাদি।
মানুষের মস্তিস্ক এক সেকেন্ডে দশলক্ষের অধিক তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে পারে7 আপনার মস্তিস্ক এই সমস্ত তথ্যের মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ওজন করতে পারে এবং একই সাথে কোনটি অগুরুত্বপূর্ণ তা আলাদা করতে পারে। বাছাইকরণ প্রক্রিয়া হল সেটা যা আপনাকে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিতে এবং ব্যবহার করতে সাহায্য করে। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চেয়ে মস্তিস্ক ভিন্ন ভাবে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার, বাছাই করার ক্ষমতা, অনুভ‚তি তৈরী করা, স্বপ্ন দেখা ও পরিকল্পনা করা, পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং অন্য লোকদেরকে এর সাথে অন্তর্ভুক্ত করা।
চোখ...প্রায় সত্তর লক্ষ রং পৃথক করতে পারে। এটি প্রায় ১.৫ মিলিয়ন তথ্যকে ফোকাস করতে ও তত্ত্বাবধান করতে পারে—তাও আবার একসাথে।৭ বিকাশের প্রক্রিয়া পরিবর্তনের দিকে দৃষ্টি দেয় এবং অঙ্গের মধ্যেই তার পরিবর্তন নিয়ে আসে। যদিও বিকাশের প্রক্রিয়া চোখ বা মস্তিস্কের তাৎক্ষণিক উৎস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারে না-- কিন্তু তা মৃত থেকে জীবন্ত কিছুর শুরু বলতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে একমত যে এই পৃথিবী একটি শক্তি ও আলোর মহা-বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে যাকে আমরা এখন বিগব্যাঙ বলে থাকি। যা কিছুর অস্তিত্ব আছে তার সবকিছুই এখান থেকে শুরু হয়েছে: মহাবিশ্বের শুরু, মহাকাশের তারা, এবং এমনকি সময়ও।
জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞানী রবার্ট জাস্টরো, তার নিজের একটি উদ্ধৃতিতে বলেছেন, “বিশ্বে যা কিছু ঘটেছে তার সবকিছুর প্রাথমিক সময়ের মধ্যে ঘটেছে; প্রত্যেকটি তারা, প্রত্যেকটি গ্রহ এবং পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত সৃষ্ট এই মহাজাগতিক বিষ্ফোরণের সময়েই স্থাপিত হয়েছে... বিশ্ব বসবাসের আকার ধারণ করেছে এবং কিভাবে এটি ঘটেছে আমরা তার কারণ খুঁজে বের করতে পারব না।”৯
পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত স্টিভেন উইনবার্গ বলেছেন যে বিস্ফোরণের সময়, “বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড প্রায় একশত হাজার মিলিয়ন ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রায় ছিল... এবং সমস্ত পৃথিবী আলোতে পূর্ণ ছিল।”১০
পৃথিবীর অস্তিত্ব সব সময় ছিল না। এর একটি শুরু ছিল..কিভাবে হয়েছে? বিজ্ঞানীদের কাছে সেই আলো ও বিষয়বস্তুর হঠাৎ বিস্ফোরণের কোন ব্যাখ্যা নেই।
জীবনের অনেক কিছুই অনিশ্চিত, কিন্তু দেখুন কোন বিষয়গুলো আমরা দিনের পর দিন গণনা করতে পারি: গ্রাভিটি/মহাকর্ষশক্তি একই রকম রয়েছে, এক কাপ গরম কফি যদি কোন এক কোণায় রেখে দেয়া হয় তাহলে তা ঠান্ডা হয়ে যাবে, পৃথিবী ২৪ ঘন্টা ধরে একই ভাবে ঘুরছে, এবং আলোর গতি কখনোই পরিবর্তিত হচ্ছে না—তা পৃথিবীতেই হোক কিংবা আমাদের থেকে দূরে কোন গ্রহেই হোক।
কিভাবে আমরা বুঝতে পারি যে প্রকৃতির নিয়ম কখনোই পরিবর্তিত হয় না? কেন মহাবিশ্ব এত সুশৃঙ্খল, এত নির্ভরযোগ্য?
“একজন মহান বিজ্ঞানী তিনিও এই অদ্ভুত বিষয় নিয়ে আটকে গেছেন। একটি মহাবিশ্বের এমন কোন যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তা নেই যে তাকে নিয়ম মানতেই হবে, তবে গণিতের নিয়ম মেনে চলে। এই অবাক করা বিষয়টি এই স্বীকৃতি থেকে আসছে যে মহাবিশ্বকে এমন আচরণ করার দরকার নেই। এমন এক মহাবিশ্বের কল্পনা করা সহজ যেখানে পরিস্থিতি এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হয়, অথবা এমন এক মহাবিশ্ব যেখানে পরিস্থিতি ওঠানামা করে।”১১
কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিকস-এ নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত রিচার্ড ফেইনম্যান বলেছেন, ‘‘প্রকৃতি কেন গাণিতিক তার একটি রহস্য আছে...কারণ সেখানে অনেক নিয়ম আছে যা এক ধরণের অলৌকিক ঘটনার মত।”১২
সমস্ত নির্দেশনা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণের একটি উদ্দেশ্য আছে। যখন কেউ কোন নির্দেশনা পুস্তক লেখেন তার পিছনে উদ্দেশ্য থাকে। আপনি কি জানেন যে আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি কোষ বিস্তারিত নির্দেশনা কোড নিয়ে অবস্থান করছে, ঠিক যেভাবে কম্পিউটারের প্রোগ্রামগুলোতে থাকে? আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, কম্পিউটারের একটি প্রোগ্রাম তৈরী হয় ১ এবং ০ দিয়ে, ঠিক এই রকম: ১১০০১০১০১০১১০০০. যেভাবে তাদেরকে সাজানো হয় সেটা কম্পিউটারকে বলে দেয় যে কি করতে হবে। আমাদের শরীরের কোষগুলো ডিএনএ কোডগুলোও ঠিক একই রকম। এটি চারটি রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরী যেগুলোকে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন এ, টি, জি, এবং সি হিসাবে। এগুলো মানব শরীরের কোষের মধ্যে এভাবে সাজানো থাকে: সিজিটিজিটিজিএসিটিসিজিসিটিসিসিটিসিএটি এবং এভাবে চলতে থাকে। প্রত্যেক মানুষের কোষের মধ্যে তিন বিলিয়ন অক্ষর বিদ্যমান!!
ঠিক যেভাবে কোন সুনির্দিষ্ট / বিশেষ কারণে আপনি আপনার মোবাইল ফোনকে বিপ সংকেত দিতে পারেন, ঠিক একই ভাবে ডিএনএ কোষগুলোকে সংকেত দেয়। মানব শরীরের এই তিন বিলিয়ন অক্ষরের ডিএনএ প্রোগ্রাম কোষগুলো নির্দিষ্টভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দেয়। এটি একটি পরিপূর্ণ নির্দেশনা পুস্তকের মত।১৩
কেন এটি এত বিষ্ময়কর? একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন ... কিভাবে শরীরের প্রত্যেকটি কোষ এই নির্দেশনাগুলোকে মেনে চলে? এগুলো শুধুমাত্র কোন রাসায়নিক পদার্থ নয়। এগুলো এমন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা কোড আকারে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয় যে মানুষের শরীরের অংশগুলো ঠিক কিভাবে বৃদ্ধি পাবে।
যখন এভাবে নির্দেশনাগুলো প্রোগ্রাম করা থাকে তখন স্বাভাবিকভাবে আপনি জৈবিক কারণগুলো খুঁজে পাবেন না। তাই যদি কেউ পূর্বে ইচ্ছাকৃত ভাবে এভাবে নির্দেশনাগুলোকে সৃষ্টি না করেন বা না সাজান তাহলে এই রকমভাবে পূর্ব নির্ধারিত তথ্য বা নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
কোন এক সময় আমি নাস্তিক ছিলাম। এবং অনেক নাস্তিকদের মত, লোকদের ঈশ্বরের বিশ্বাস করার বিষয়টি আমারও খুবই বিরক্ত লাগত। নাস্তিক হিসাবে কেন আমরা এমন কোন বিষয়ের জন্য আমাদের সময়, মনোযোগ, এবং শক্তি খরচ করবো যার অস্তিত্ব আমরা বিশ্বাসই করি না?! আমাদের তা করার কারণ কি? আমি যখন নাস্তিক ছিলাম, তখন আমি আমার উদ্দেশ্য ছিল সেই গরিব ও প্রতারিত লোকদের যত্ন নেয়া...তাদেরকে এটা বুঝাতে যে তারা যা প্রত্যাশা করছে তা একেবারেই অমূলক বা অহেতুক। সত্যি বলতে আমার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল। যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করত তাদেরকে যেহেতু আমি চ্যালেঞ্জ দিতাম তাই আমি খুবই উৎসুক ছিলাম এটা দেখার জন্য যে দেখি তারা আমাকে বোঝাতে/বিশ্বাস করাতে পারে কিনা। আমার এই অনুসন্ধানের আরেকটি বিষয় হল আমি ঈশ্বরের প্রশ্ন থেকে মুক্ত থাকতে চাইতাম। যদি আমি বিশ্বাসীদেরকে বোঝাতে পারতাম যে তারা ভুল, তাহলে বিষয়টি বাদ হয়ে যেত এবং আমি আমার জীবন নিয়ে স্বাধীন হয়ে যেতাম।
আমি বুঝতেই পারি নি যে, ঈশ্বর সম্পর্কিত এই বিষয়গুলো আমাদের হৃদয়ে এত ভারী বোঝা তৈরী করবে, কারণ ঈশ্বর বিষয়গুলো আমার মধ্যে ঢোকাচ্ছিলেন। আমি বুঝতে পারছিলাম যে ঈশ্বর নিজেকে প্রকাশ করতে চান। তিনি আমাদেরকে এই উদ্দেশ্য নিয়েই সৃষ্টি করেছিলেন যেন আমরা তাঁকে জানতে পারি। তিনি আমাদের চারপাশে তাঁর নিজের সম্পর্কে অনেক প্রমাণ রেখেছেন এবং আমাদের সামনে তার অস্তিত্বের অনেক চিহ্ন রেখেছেন। এটা এমন ছিল যে মনে হচ্ছিল আমি কোন ভাবেই ঈশ্বরের বিষয়ে চিন্তাগুলোকে মাথা থেকে সরাতে পারছিলাম না। এমনকি যেদিন আমি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমি এভাবে প্রার্থনা শুরু করেছিলাম, “ঠিক আছে, তুমি জিতেছ..” এই কারণেই হতে পারে নাস্তিকেরা ঈশ্বরের বিশ্বাসী লোকদের সহ্য করতে পারে না কারণ ঈশ্বর সক্রিয়ভাবে তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
শুধুমাত্র আমারই এই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে এমন নয়। সমাজতান্ত্রিক ও দার্শনিক লেখক ম্যাককলাম মুগারিডস লিখেছেন, “আমার মনে হচ্ছিল যে কোন না কোনভাবে প্রশ্নের পাশাপাশি আমাকে তাড়া করা হচ্ছিল।” সি.এস. লুইস বলেছেন, “...রাতের পর রাত ধরে আমার এটা মনে হয়েছে যে যখনই আমার মন কাজ থেকে এক সেকেন্ডের জন্য সরে যেত তখনই ঈশ্বরের বিষয়ে আমার চিন্তা আসতো যার সাথে মোটেই সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছুক নই। এরপর আমি এটা স্বীকার করলাম যে ঈশ্বর ঈশ্বরই ছিলেন, এবং তাঁর সামনে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করলাম: সম্ভবত, ঐ রাতে সমস্ত ইংল্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে হতাশাগ্রস্থ ও অনিচ্ছুক ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছিল।”
ঈশ্বরকে জানার ফলাফল হিসাবে লুইস একটি বই লিখেছিলেন যার নাম ছিল, “আনন্দে উল্লাসিত (সারপ্রাইজড বাই জয়)”। আমারও ঈশ্বরের অস্তিত্বকে যথাযথভাবে স্বীকার করা ছাড়া আর কোন সুযোগ ছিল না। তারপরের কয়েক মাসে, আমার জন্য ঈশ্বরের যে ভালবাসারয়েছে তা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
কেন যীশু? পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন এবং আপনি খুঁজে পাবেন যে বুদ্ধ, মোহাম্মদ, কনফুসিয়াস, এবং মোশী সবাই তারা নিজেদেরকে একজন শিক্ষক ও নবী হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউই ঈশ্বরের সমান হওয়ার কথা দাবি করেন নি। আশ্চর্যজনকভাবে, যীশু তা দাবি করেছেন। এই বিষয়টিই অন্যদের থেকে যীশুকে আলাদা করেছে। তিনি বলেছেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে এবং আপনারা তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছেন। যদিও তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার কথা বলতেন, তা কোন আলাদা অবস্থান থেকে নয় কিন্তু সমস্ত মানবজাতির খুব কাছে থেকে বলেছেন। যীশু বলেছেন যে যতজন তাঁকে দেখেছেন তারা তাঁর পিতাকেও দেখেছেন, যতজন তাঁকে বিশ্বাস করেছেন তারা পিতাকেও বিশ্বাস করেছেন।
তিনি বলেছেন, “আমিই জগতের আলো, যারা আমার পথে চলে তারা কখনো অন্ধকারে পা দেবে না বরং জীবনের আলো পাবে।”১৪ তিনি এমন সব বৈশিষ্ট্যগুলো দাবি করেছেন যা শুধুমাত্র ঈশ্বরের মধ্যেই আছে: মানুষকে তাদের পাপের ক্ষমা প্রদান করা, পাপের অভ্যাস থেকে তাদেরকে মুক্ত করা, লোকদেরকে একটি প্রাচুর্যের জীবন দেয়া এবং তাদেরকে স্বর্গে যাওয়ার অনন্ত জীবন দান করা। অন্যান্য শিক্ষকরা যেখানে নিজেদের কথার দিকে লোকদের মনোযোগ নিতে চেষ্টা করেছেন সেখানে যীশু তা করেন নি। তিনি বলেন নি যে, “আমার কথা শোন তাহলে তুমি সত্য খুঁজে পাবে।” তিনি বলেছেন, “আমিই পথ, সত্য ও জীবন। আমার মধ্যে দিয়ে না গেলে কেউ পিতার কাছে যেতে পারে না।”১৫
নিজেকে ঈশ্বর প্রমাণ করার জন্য যীশু কি প্রমাণ দিয়েছেন? তিনি তাই করেছেন যা কোন মানুষ করতে পারে না। যীশু আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করেছেন। তিনি লোকদের সুস্থ করেছেন...অন্ধদের দেখতে দিয়েছেন, খোঁড়াদের হাঁটতে দিয়েছেন, বধিরদের শুনতে দিয়েছেন এমনকি অনেক মৃত লোকদেরকে তিনি জীবিত করেছেন। জিনিসপত্রের উপরও তাঁর ক্ষমতা ছিল... বাতাস থেকেও তিনি খাবার সৃষ্টি করেছেন যা হাজার হাজার লোকদেরকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি প্রকৃতির উপরও অলৌকিক কাজ করেছেন... পানির উপর দিয়ে হেঁটেছেন, বন্ধুদেরকে রক্ষা করার জন্য অশান্ত ঝড়কেও শান্ত হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। সব জায়গায় লোকেরা তাঁকে অনুসরণ করতো, কারণ অলৌকিক কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত তাদের চাহিদা পূরণ করছিলেন। তিনি বলেছেন যদি তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস না কর তাহলে অন্তত আমার অলৌকিক কাজ দেখে আমাকে বিশ্বাস কর।১৬
যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরকে আমাদের কাছে শান্ত, ভালবাসার, আমাদের স্বার্থকেন্দ্রীক ও দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে সতর্ক হিসাবে প্রকাশ করেছেন কিন্তু তবুও তিনি আমাদের সাথে একটি গভীর সম্পর্ক তৈরী করতে চেয়েছেন। যীশু প্রকাশ করেছেন যে যদিও তিনি আমাদেরকে একজন পাপী এবং শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হিসাবে দেখেন তবুও তিনি আমাদেরকে ভালবেসে একটি ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে আসলেন। ঈশ্বর নিজে মানুষের রুপ ধারণ করলেন এবং আমাদের পক্ষে আমাদের পাপের শাস্তি নিজে ভোগ করলেন। বিষয়টি কেমন হাস্যকর মনে হচ্ছে তাই না? সম্ভবত, কিন্তু যদি সম্ভব হত তাহলে অনেক ভালবাসার পিতারা তাদের সন্তানদের ক্যান্সার নিজেদের শরীরে নিয়ে নিতেন। বাইবেল আমাদের বলে যে, যে কারণে আমাদের ঈশ্বরকে ভালবাসা উচিত তা হল প্রথমে তিনিই আমাদেরকে ভালবেসেছেন।
যীশু আমাদের জায়গায় মরলেন যেন আমরা ক্ষমা পাই। মানব সমাজে যত ধর্ম রয়েছে তাদের সবার মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন যে, শুধুমাত্র যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বর মানুষের কাছাকাছি এসেছেন এবং এমন একটি পথ প্রস্তুত করেছেন যেন তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক তৈরী হয়। আমাদের অভাব পূরণ করা ও তাঁর দিকে আমাদের আহ্বান করার মধ্যে দিয়ে যীশু তাঁর ঐশ্বরিক ভালবাসার হৃদয় প্রমাণ করেছেন। যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের কারণেই তিনি আজকে আমাদেরকে নতুন জীবন দান করছেন। আমরাও ক্ষমাপ্রাপ্ত হতে পারি, ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণরুপে গ্রহণযোগ্য হতে পারি এবং ঈশ্বরের দ্বারা সত্যিকারভাবে ভালবাসাপ্রাপ্ত হতে পারি। তিনি বলেছেন, “অশেষ ভালবাসা দিয়ে আমি তোমাদের ভালবেসেছি; অটল ভালবাসা দিয়ে আমি তোমাদের কাছে টেনেছি।”১৭ এটাই হচ্ছেন ঈশ্বর ও তাঁর কাজ।
ঈশ্বর কি আছেন/ঈশ্বরের কি অস্তিত্ব আছে? আপনি যদি জানতে চান, তাহলে যীশু খ্রীষ্টকে নিয়ে গবেষণা করুন। আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, “ঈশ্বর জগতকে এত ভালবাসলেন যে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে দান করলেন যেন যে কেহ তাঁকে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।”১৮
তাঁকে বিশ্বাস করার জন্য ঈশ্বর কখনোই আমাদের জোর করেন না, যদিও তিনি তা করতে পারেন। তার পরিবর্তে, আমাদের কাছে তিনি তাঁর অস্তিত্বের যথেষ্ট পরিমানে প্রমাণ দিয়েছেন যাতে আমরা স্বইচ্ছায় তাঁর প্রতি সাড়াপ্রদান করি। সূর্য থেকে পৃথিবীর সঠিক দূরত্ব, পানির মধ্যে বিদ্যমান অনন্য রাসায়নিক পদার্থসমূহ, মানুষের মস্তিস্ক, ডিএনএস, বিভিন্ন লোক যারা জীবনে ঈশ্বরকে জানার সাক্ষ্য রয়েছে, ঈশ্বর রয়েছেন সেই সম্পর্কে আমাদের হৃদয় ও মনের মধ্যে যে যন্ত্রণা, যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরকে জানতে চাওয়া ইত্যাদি সবই তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ। যদি আপনি যীশুর সম্পর্কে আরো জানতে চান এবং তাঁকে বিশ্বাস করতে চান, তাহলে এই লিংকটি দেখুন: অন্ধ বিশ্বাসের বাইরে.
এটি আপনার সিদ্ধান্ত, এখানে কোন জোরাজুরি নেই। কিন্তু যদি আপনি চান যে ঈশ্বর আপনাকে ক্ষমা করুন এবং তাঁর সাথে আপনার একটি সম্পর্ক স্থাপিত হোক, তাহলে এখনই আপনি তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন এবং তাঁকে আপনার জীবনে আসতে বলতে পারেন। যীশু বলেছেন, ‘‘দেখ, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে [আপনার হৃদয়ের কাছে] আছি এবং আঘাত করছি। যদি কেউ আমার গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেয় তবে আমি ভিতরে তার কাছে যাব।’’১৯ যদি আপনি তা করতে চান কিন্তু বুঝতে পারছেন না কিভাবে তা শব্দের মধ্যে দিয়ে বলবেন, তাহলে হয়তো এটি আপনাকে সাহায্য করবে: “যীশু, আমার পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি আমার জীবন জান এবং জান যে আমার ক্ষমা প্রয়োজন। আমি এখনই চাই যেন তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার জীবনে আস। আমি তোমাকে সত্যিকারভাবে জানতে চাই। এখনই আমার জীবনে এস। ধন্যবাদ দেই যে তুমি আমার সাথে সম্পর্ক করতে চেয়েছো। আমেন।”
ঈশ্বর আপনার সাথে সম্পর্ককে স্থায়ী ভাবে দেখেন। সমস্ত বিশ্বাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, “আমি তাদের জানি, এবং তারা আমার পিছনে পিছনে চলে; এবং আমি তাদের অনন্ত জীবন দেই, তারা কখনও বিনষ্ট হবে না এবং কেউই আমার হাত থেকে তাদের কেড়ে নেবে না।”20
এই সমস্ত বিষয়গুলো দেখার পর একজন এই উপসংহার টানতে পারেন যে একজন ভালবাসার ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে এবং তাঁকে গভীরভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে জানা সম্ভব।
পাদটিকা: (1) রোমীয় 1:19-21 (2) যিরমিয় 29:13-14 (3) আর.ই.ডি. ক্লার্ক, সৃষ্টি (লন্ডন: টাইনডেল প্রেস, ১৯৪৬), পৃষ্ঠা-২০ (4) ঈশ্বরের বিষ্ময়কর সৃষ্টি, মুডি ইনিষ্ট্রিটিউড অব সাইন্স (চিকাগো, আইএল) (5) আইবিআইডি (6) আইবিআইডি (7) আইবিআইডি (8) হাগ ড্যাবসন, সাইকোলজি অব দ্যা আই, ৫ম ইড (নিউইয়র্ক: ম্যাকগ্রে হিল, ১৯৯১) (9) রবার্ট জাস্টরো; ÔÔম্যাসেজ ফর্ম প্রফেসর রবার্ট জাস্টরো”; লিডারইউ.কম; ২০০২. (10) স্টিভেন ইউনবার্গ; দ্যা ফার্স্ট থ্রি মিনিটস: এ মডার্ন ভিউ অব দ্যা অরিজিন অব দ্যা ইউনিভার্স; (বেসিক বুক ১৯৮৮); পৃষ্টা ৫। (11) ডেনিস ডি’সুজা, হোয়াটস সো গ্রেট এবাউট খ্রিীষ্টয়ানিটি; (রিগনারী পাবলিশিং, ইন্টাার, ২০০৭, ১১ অধ্যায়)। (12) রিচার্ড ফেনম্যান, দ্যা মিনিং অব ইট অল: থটস অব এ সিটিজেন-সাইনটিষ্ট (নিউ ইয়র্ক: বেসিকবুক ১৯৯৮), ৪৩. (১৩) ফ্রান্সিস এস.কলিন্স, হিউম্যান জিনমি প্রোজেক্টের পরিচালক এবং দ্যা ল্যাংগুয়েজ অব গড বইয়ের লেখক, (ফ্রি প্রেস, নিউইয়র্ক, এন্ওয়াই), ২০০৬ (১৪) যোহন ৮:১২ (১৫) যোহন ১৪:৬ (১৬) যোহন ১৪:১১ (১৭) যিরমিয় ৩১:৩ (১৮) যোহন ৩:১৬ (১৯) প্রকাশিত বাক্য ৩:২০ (২০) যোহন ১০:২৭-২৯9