এই পৃথিবীতে আমাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা জীবনে যাই ঘটুক না কেন, এখানে কি এমন কোন জায়গা আছে যেখানে স্থির হওয়া যাবে? জীবন এবং পৃথিবীর পরিস্থিতিগুলো নির্বিশেষে আমরা কি আশা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি? আজকাল অনেক মানুষই ঈশ্বরের গুরুত্বকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছে। আমাদের চারপাশের বিশ্ব সর্বদাই পরিবর্তনশীল, কিন্তু ঈশ্বর কখনও বদলান না। তিনি স্থির, ভরসাযোগ্য। তিনি বলেন,‘‘ আমি ছাড়া আর কি কোন ঈশ্বর আছে? না, আর কোন আশ্রয়-পাহাড় নেই; আমি আর কাউকে জানি না। আমি সদাপ্রভু, আমার কোন পরিবর্তন নেই।”১ ঈশ্বর সবসময়ই আছেন। তার ওপর নির্ভর করা যেতে পারে। তিনি ‘‘কালকে যেমন ছিলেন, আজকেও তেমনি আছেন এবং চিরকাল তেমনি থাকবেন।’’২ আর ঈশ্বর, আমাদেরকে যীশুর মাধ্যমে অন্তরের শান্তি দিয়ে, আমাদের অন্তরকে নিশ্চিন্তে বিশ্রাম দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন।
স্ট্যানফোর্ডের একজন গ্রেড, হিথার এভাবে বলেছেন: ‘‘ ঈশ্বরের সাথে বাস্তবিক সম্পর্ক রাখাটা প্রাত্যহিক জীবনে বিষ্ময়কর এবং সৌন্দর্যময় একটি বিষয়। এখানে ‘মহাজাগতিক সাহচর্য্য’ রয়েছে যার জন্য আমি বিশ্বের কাছে নিজেকে বিক্রি করব না। আমাকে এতটাই গভীরভাবে জানা হয়েছে এবং ভালবাসা হয়েছে যে যার মাধ্যমে আমি যথেষ্ট পরিমাণ যোগাযোগ করতে পারি।’’
একজন হিমোফিলিয়াক স্টিভ সাওয়ের, যখন জানতে পারেন যে তার দূষিত রক্ত সংক্রমণজনিত কারণে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন তখন তিনি এর একটি স্থায়ী সমাধান করতে উদ্ভুদ্ধ হন। প্রথমে স্টিভ অনেক হতাশাগ্রস্থ ছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে দোষারোপ করতেন। কিন্তু পরে স্টিভ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছালেন। ফলাফলস্বরূপ: স্টিভ গত কয়েক বছরে (ব্যাথা থাকা সত্ত্বেও) অগণিত কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়িয়েছেন শুধুমাত্র তার সহপাঠী শিক্ষার্থীদের এটা বলার জন্য যে কীভাবে তারা ঈশ্বরকে জানতে পারে এবং তিনি যেমন করে ঈশ্বরের শান্তির অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তারাও এই একই অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। ঈশ্বর বলেছেন,‘‘ “আমি তোমাদের জন্য শান্তি রেখে যাচ্ছি, আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি; জগৎ যেভাবে দেয় আমি সেইভাবে দিই না। তোমাদের মন যেন অস্থির না হয়। এই জগতে তোমরা কষ্ট ও চাপের মুখে আছ, কিন্তু সাহস হারায়ো না; আমিই জগৎকে জয় করেছি।”৩
স্টিভের মতই অন্যরাও এটা শিখেছে যে জীবনে যাই হয়ে যাক না কেন, সেটাই ‘‘এই পৃথিবীর শেষ দিন নয়’’—কারণ এই পৃথিবীই শেষ নয়।
নি:সন্দেহেই, লোকেরা যতক্ষণ পর্যন্ত খারাপ পরিস্থিতিতে না পড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত ঈশ্বরের কাছে আসে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একজন সামরিক চ্যাপেলিন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে,‘‘ আশ্রয়-কোটরের মধ্যে কোন নাস্তিক নেই।’’ জীবন যখন মনোহর, তখন এখানকার লোকেরা ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। কিন্তু প্রায়ই যখন আমরা বুঝতে পারি যে আমরা সমস্যায় পড়েছি, পরিস্থিতি বেগদিক তখন এটা পরিবর্তিত হয়।
কেরিন তার ঈশ্বরের পথে আসার বিষয়টি এভাবে ব্যক্ত করেন: ‘‘আমি রবিবারে গীর্জায় যেতাম বলে নিজেকে খ্রীষ্টিয়ান ভাবতাম, কিন্তু আসলে আমার ঈশ্বর সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিল না। আমার অন্য তিনটি বছরের মতই উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র বছরে থাকাকালীন সময়গুলোও একইভাবে গিয়েছে। আমি বেশিরভাগ সময়ই মাতাল, নেশাগ্রস্ত, এবং আমাকে ভালবাসে এমন কারো খোঁজ করে বেড়াতাম। আমি ভেতরে ভেতরে মারা যাচ্ছিলাম এবং আমার জীবনের উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যখন আমি কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিলাম তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আমার জীবনকে শেষ করে দিতে চেয়েছি আর এর জন্য আমাকে নতুন আশা খুঁজে বের করতে হতো।সেই সময়ই আমি ঈশ্বরকে আমার জীবনে আসতে অনুরোধ করি। তিনি আমাকে তাঁর ভালবাসা, নিরাপত্তা, ক্ষমা, সাহায্য, স্বাচ্ছন্দ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, এবং বাঁচার জন্য উদ্দেশ্য দেখান। তিনিই আমার শক্তি, এবং তিনি যদি না থাকতেন তাহলে আমি আজ এখানে থাকতাম না।’’
ভবিষ্যতে কী হবে তা কি কেউ জানে? অনেকেই মনে করতে পারেন যে তারা কোন আশ্রয়-কুটিরে আছেন। জীবন সংগ্রামময় হতে পারে। আমাদের মনের শান্তিকে মারাত্বকভাবে নাড়ানো হতে পারে। সেইসব খারাপ মূহূর্তগুলো যখন চলে, তখন আমরা প্রায়ই ঈশ্বরকে ডাকি। এটা ঠিক আছে, কারণ ঈশ্বর,যিনি সর্বদাই আছেন, তিনি আছেন এবং তিনি সত্যিকারভাবেই আমাদের জীবনে আসতে চান। তিনি বলেছেন,‘‘ আমি, আমিই সদাপ্রভু, আমি ছাড়া আর কোন উদ্ধারকর্তা নেই। “হে পৃথিবীর সব শেষ সীমাগুলো, আমার দিকে ফেরো এবং উদ্ধার পাও, কারণ আমিই ঈশ্বর, আর কেউ ঈশ্বর নয়।’’৪
হ্যাঁ, ঈশ্বরকে ‘‘খঞ্জেঁর যষ্টি’’ হিসেবে কল্পনা করা যেতে পারে, কিন্তু এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ যে তিনিই একমাত্র সত্যিকারের খাঁটি স্বত্ত্বা।
কিছু লোক আছে যাদের জীবন যখন ভালভাবে চলে তখন তারা ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়। যোহন একে ব্যাখ্যা করেছেন যে: আমি যখন জ্যেষ্ঠ বছরে ছিলাম তখন মানুষেরা আমাকে পূর্ণতালাভের জন্য যা যা করতে বলেছিল তার সবই্ আমি অর্জন করেছিলাম—ক্যাম্পাসের সংস্থাগুলোতে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা পালন, অনুষ্ঠান করা, ভাল নম্বর পাওয়া, মেয়েদের সাথে সাক্ষাৎ করা; এগুলোর প্রতি আমি খুবই আকৃষ্ট হয়েছিলাম। আমি যা করতে চেয়েছিলাম এবং যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম তা কলেজে থাকাকালীন সময়েই পেয়ে গিয়েছিলাম—কিন্তু তবুও আমার মধ্যে অসম্পূর্ণতা বিরাজ করছিল। তখনও কোন কিছুর ঘাটতি ছিল এবং আমার আর কোথাও যাবার ছিল না। আমি যে আমার জীবনের বিষয়ে এমন ভাবছিলাম সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবেই কেউ জানত না—আমি বাহ্যিকভাবে সেটা প্রকাশ করতাম না।
যখন সবকিছু ঠিকমত চলে, জীবন তখনও আশ্রয়-কোটরের মত লাগতে পারে-- একজন শাশ্বত স্বত্ত্বা যিনি খালি চোখে অদৃশ্য কিন্তু অন্তরে উপলব্ধিযোগ্য। বেকি এই ঘটনাটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন: ‘‘আপনি কতবার এটা ভেবেছেন যে আপনি যদি সেই দামি কাপড়, বা সেই ছেলে-বন্ধুকে, অথবা কোন জায়গায় ঘুরতে যাবার সুযোগ পান তাহলে আপনার জীবন সুখের হবে এবং পরিপূর্ণতা লাভ করবে? আর কতবারই বা আপনি এই শার্টটি কিনেছেন, বা সেই ছেলের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, অথবা সেই কাঙ্খিত জায়গায় ঘুড়েছেন এবং আপনি যখন শুরু করেছেন তখন নিজেকে একা ভেবে সেখান থেকে চলে গিয়েছেন?’’
আশ্রয়-কোটরগুলো অনুভব করতে আমাদের ব্যর্থতা বা দু:খজনক কিছুর প্রয়োজন নেই। আমাদের জীবনে ঈশ্বরের অনুপস্থিতির কারণে প্রায়শই শান্তির অভাব দেখা দেয়। বেকি ঈশ্বরকে জানার বিষয়ে বলেন,‘‘ তারপর থেকে আমার জীবনে অনেক সংগ্রাম এবং পরিবর্তন আসে, কিন্তু আমি যা কিছু করি না কেন সেখানে আমার এই দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে যে আমার পাশে একজন প্রেমময় এবং অনন্তকালীন ঈশ্বর আছেন। এমন কিছুই নেই যা ঈশ্বর এবং আমি মিলে সমাধান করতে পারি না—এবং আমি যা খোঁজার জন্য এত কষ্ট করেছি, সেটা আমি শেষ পর্যন্ত পেয়ে গিয়েছি।’’
ঈশ্বর যদি আমাদের জীবনে থাকেন, তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিতে পারি। আমরা যখন ঈশ্বরকে জানতে পারি এবং বাইবেলে তিনি আমাদেরকে যা করতে বলেন তা করি, তিনি আমাদেরকে মনে শান্তি দেন, কারণ আমরা তাঁকে জানি। আমরা তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখি, তাঁর বিশ্বস্ততা এবং তিনি যে আমাদের যত্ন নিতে পারেন সম্পর্কে জানতে পারি। তাই ভবিষ্যতে যাই থাকুক না কেন, আমরা ঈশ্বরের উপর সকল আশা রাখতে পারি। যদি আমরা তাঁর দিকে ফিরি এবং তাঁকে খুঁজি তাহলে তিনি নিজেকে আমাদের জীবনে আসবেন।
আপনি কি আপনার জীবন কোন কিছুর ওপর গড়ে তুলছেন? বিশ্বাস করুন বা না করুন, প্রত্যেক মানুষই কিছু না কিছুর ওপর তার জীবন গড়ে তুলছে। আমাদের প্রত্যেকেরই একটি ভিত্তি রয়েছে, যার উপর আমরা আমাদের আশা এবং বিশ্বাসকে স্থাপন করি। এটা হয়ত আমাদের নিজেরাই—‘‘আমি জানি যে যদি আমি কঠোরভাবে চেষ্টা করে যাই তাহলে আমি আমার জীবনে সফল হতে পারব।’’ বা একটা জীবনযাত্রা—‘‘যদি আমি যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে পারি তাহলে আমার জীবনটা চমৎকার হবে।’’ অথবা এটি এমনকি নির্দিষ্ট সময়কালও হতে পারে—‘‘ ভবিষ্যতে অনেক কিছু বদলাতে যাচ্ছে।’’
ঈশ্বরের ভিন্ন দৃষ্টিকোণ রয়েছে। তিনি বলেছেন যে নিজেদের মধ্যে, অন্যের ওপরে বা এই পৃথিবীর যেকোন কিছুর ওপর সকল আশা এবং বিশ্বাস রাখাটা নড়বড়ে মাটির মত। এর পরিবর্তে তিনি চান যেন আমরা তাঁর উপর বিশ্বাস রাখি। তিনি বলেন,‘‘সেইজন্য বলি, যে কেউ আমার এই সমস্ত কথা শুনে তা পালন করে সে এমন একজন বুদ্ধিমান লোকের মত, যে পাথরের উপরে তার ঘর তৈরী করল।পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা আসল, ঝড় বইল এবং সেই ঘরের উপরে আঘাত করল; কিন্তু সেই ঘরটা পড়ল না কারণ তা পাথরের উপরে তৈরী করা হয়েছিল।যে কেউ আমার এই সমস্ত কথা শুনে তা পালন না করে সে এমন একজন মূর্খ লোকের মত, যে বালির উপরে তার ঘর তৈরী করল।পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা আসল, ঝড় বইল এবং সেই ঘরের উপরে আঘাত করল; তাতে ঘরটা পড়ে গেল। কি ভীষণ ভাবেই না সেই ঘরটা পড়ে গেল!”৫
বিপর্যয়ের সময়ে ঈশ্বরকে আমাদের জীবনে ডেকে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এই যে আমাদের জীবনে যে বিপর্যয়ই আসুক না কেন তিনি চান যেন আমরা আরও বেশি পরিপূর্ণ জীবন লাভ করতে পারি। তিনি চান যেন আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক অনুপ্রেরণা নিয়ে জীবন-যাপন করি। যখন আমরা তাঁর উপর এবং তাঁর বাক্যের উপর নির্ভর করি, তখন আমরা পাথরের উপরে আমাদের ভিত্তি স্থাপন করি।
অনেকেই একজন কোটিপতির সন্তান হবার বিষয়ে, অথবা সহজে ভাল নম্বর পাওয়ার বিষয়টি জানার বিষয়ে নিশ্চিন্ত বোধ করেন। ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক রাখার মধ্য দিয়ে এগুলোর থেকেও বেশি নিশ্চয়তা রয়েছে।
ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। ঈশ্বর জানেন কাল, আগামী সপ্তাহ, আগামী বছর, আগামী দশকে কি হতে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা তা জানি না। তিনি বলেন,‘‘ আমিই ঈশ্বর, অন্য আর কেউ নয়; আমিই ঈশ্বর, আমার মত আর কেউ নেই।’’৬ ভবিষ্যতে যা হতে যাচ্ছে তিনি তা জানেন। আর এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, আপনার জীবনে কী ঘটতে চলেছে সেটা তিনি জানেন এবং যখন সেটা হবে তখন তিনি আপনার পাশে থাকবেন, যদি আপনি তাঁকে আপনার জীবনে আসার জন্য সুযোগ দিয়ে থাকেন। তিনি আমাদের বলেন যে তিনি আমাদের ‘‘আশ্রয়স্থান এবং শক্তি’’; তিনি আমাদের বিপদের সময় সর্বদা সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকেন।’’৭ কিন্তু আমাদেরকে অবশ্যই তাঁকে খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন,‘‘ যখন তোমরা আমাকে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী হবে তখন আমাকে জানতে পারবে।’’৮
এর মানে এই নয় যে যারা ঈশ্বরকে জানে তারা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাবে না। তারা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাবে। যদি আমাদের দেশ কোন সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের শিকার হয়, প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক কোন বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যায়, এই ক্ষেত্রে যারা ঈশ্বরকে জানে তারাও অন্যদের মত একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে। কিন্তু ঈশ্বরের উপস্থিতি শান্তি এবং শক্তির যোগান দেয়। যীশু খ্রীষ্টের একজন অনুসারী এইভাবে বলেছেন: ‘‘সব দিক থেকেই আমাদের উপর চাপ পড়ছে, তবু আমরা ভেংগে পড়ছি না। বুদ্ধিহারা হলেও আমরা সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ছি না;অত্যাচারিত হলেও ঈশ্বর আমাদের ত্যাগ করছেন না; মাটিতে আছড়ে ফেললেও আমরা ধ্বংস হচ্ছি না।’’৯ বাস্তবতা আমাদের বলে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হবই। তবে, আমরা যদি সেগুলোকে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কে মধ্য দিয়ে নিয়ে যাই তাহলে আমরা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এবং আমাদের নিজস্ব কোন শক্তি ছাড়াই সেগুলোর মোকাবিলা করতে পারব। এমন কোন সমস্যা নেই যা ঈশ্বরের কাছে অদমনীয়। আমাদেরকে যেসব সমস্যাগুলো আঘাত করতে পারে, তিনি সেগুলো থেকেও অনেক বেশী ক্ষমতাসম্পন্ন, এবং তাঁর সাহায্য চাওয়ার জন্য আমরা একা নই।
ঈশ্বর যত্ন নেন: ঈশ্বরের মহান শক্তি তাঁর গভীর ভালবাসার সাথে সংযুক্ত, যা আমাদের জীবনে দেখা যায়। ভবিষ্যতে বিশ্ব আগের থেকে অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ হতে পারে, অথবা সেখানে আরও জাতিগত বিদ্বেষ এবং সহিংসতা, আরও বেশি বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদিও হতে পারে। উভয়ক্ষেত্রেই, ঈশ্বর আমাদেরকে যেভাবে ভালবাসেন সেভাবে আর কেউ আমাদের ভালবাসতে পারে না। ঈশ্বর যেভাবে আমাদের যত্ন নেন সেভাবে কেউই আমাদের যত্ন নিতে পারে না। তাঁর বাক্য আমাদের বলে যে,‘‘ সদাপ্রভু মংগলময়, কষ্টের সময়ের আশ্রয়স্থান। যারা তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয় তিনি তাদের দেখাশোনা করেন।’’১০ ‘‘ তোমাদের সব চিন্তা-ভাবনার ভার তাঁর উপর ফেলে দাও, কারণ তিনি তোমাদের বিষয়ে চিন্তা করেন।’’১১ এবং ‘‘সদাপ্রভু তাঁর সমস্ত পথে ন্যায়বান আর সমস্ত কাজে বিশ্বস্ত। যারা সদাপ্রভুকে ডাকে, অন্তর দিয়ে ডাকে, তিনি তাদের কাছেই থাকেন। যারা তাঁকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে তাদের মনের ইচ্ছা তিনি পূরণ করেন; সাহায্যের জন্য তাদের কান্না শুনে তিনি তাদের রক্ষা করেন।’’১২
যীশু খ্রীষ্ট তাঁর অনুসারীদের এই ধরণের আশ্বাসমূলক কথা বলেছেন:‘‘ দু’টা চড়াই পাখী কি সামান্য দামে বিক্রি হয় না? তবুও তোমাদের পিতা ঈশ্বরের অনুমতি ছাড়া তাদের একটাও মাটিতে পড়ে না;এমন কি, তোমাদের মাথার চুলগুলোও গোণা আছে।কাজেই তোমরা ভয় পেয়ো না। অনেক অনেক চড়াই পাখীর চেয়েও তোমাদের মূল্য অনেক বেশী।’’১৩ যদি আপনি ঈশ্বরের দিকে মুখ ফেরান, তাহলে তিনি আপনাকে সেভাবে যত্ন নেবেন যেভাবে কেউই যত্ন নেয় না, এবং এমন উপায়ে যত্ন নেবেন যেটা কেউই পারে না।
ভবিষ্যতে কী আছে সে বিষয়ে আমাদের কোন ধারণাই নেই। যদি এটি কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে আসে, তখন ঈশ্বর আমাদের সাথে থাকবেন। যদি এটা সুখকর কিছু নিয়ে আসে, তাহলে তখনও আমাদের ঈশ্বরকে প্রয়োজন যাতে তিনি আমাদের ভেতরের শূন্যতা এবং আমাদের জীবনের অর্থের পরিপূর্ণতা দিতে পারেন।
যখন সবকিছু বলা শেষ হয়ে গেছে এবং করা হয়ে গেছে, তখন কোন বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল যে আমরা ঈশ্বরের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই নি। আমরা কি ঈশ্বরকে চিনি? তিনি কি আমাদের চেনেন? তাঁকে কী আমরা আমাদের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি? নাকি আমরা তাঁকে আমাদের জীবনে আসতে দিয়েছি? তাঁকে জানার মাধ্যমে, আমরা সকল পরিস্থিতির মধ্যেও শান্তি পেতে পারি।
ঈশ্বর কেন আমাদের জীবনের কেন্দ্র হবেন? কারণ তাঁকে জানা ছাড়া কোন সত্যিকারের শান্তি এবং আশা বিদ্যমান নেই। তিনিই ঈশ্বর আমরা নই। তিনি আমাদের উপর নির্ভরশীল নন, কিন্তু তাঁর উপর আমাদের আবশ্যিকভাবে নির্ভরশীল হতে হয়। আমাদের জীবনে যাতে তাঁর উপস্থিতি থাকে সেজন্যই তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমরা তাঁকে ছাড়া জীবন গঠন করার চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু এটা আমাদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই হবে না।
ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁকে খুঁজি। তিনি চান যেন আমরা তাঁকে জানতে চাই এবং আমাদের জীবনে আসতে দিই। কিন্তু এখানে একটা সমস্য রয়েছে; সেটা হল: আমরা তাঁকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। বাইবেল এভাবে বর্ণনা দেয়: ‘‘আমরা সবাই ভেড়ার মত করে বিপথে গিয়েছি; আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের পথের দিকে ফিরেছি।’’১৪ আমরা সবাই ঈশ্বরকে ছাড়া নিজেদের জীবন গড়তে চেয়েছি। আর একেই বাইবেল ‘‘পাপ’’ হিসেবে সম্মোধন করে।
হিথার, যিনি আগে বলেছিলেন, তিনি পাপ সম্বন্ধে বলেন:‘‘যখস আমি স্ট্যানফোর্ডে ভর্তি হলাম, তখন আমি খ্রীষ্টিয়ান ছিলাম না। বিশ্ব আমার বিপ্লবিত হবার চাইতে আমার পায়ে আগে পড়েছিল। আমি রাজনৈতিক সভায় অংশগ্রহণ করেছি, বর্ণবাদ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করেছি, এবং নিজেকে সামাজিক সেবা কেন্দ্রের কাজে মগ্ন করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করতাম যে আমার মধ্যে যে ক্ষমতা রয়েছে সেটা দ্বারা আমি সারাবিশ্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবো। আমি সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চা শিশুদেরকে শিক্ষা দিয়েছি এবং ঘরহীনদের আশ্রয়ের জন্য সারাদিনব্যাপী ক্যাম্প পরিচালনা করেছি, আমি বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে ক্ষুধার্তদের খাবার দিয়ে সাহায্য করেছি। আমি আমলাতন্ত্র, উদাসীনতা, এবং পাপের মুখোমুখি হয়েছি। আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম যে হয়ত মানুষের স্বাভাবিক আচরণকে প্রাথমিকভাবে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা দরকার।’’
পরিবর্তিত সময় এবং উন্নত প্রযুক্তি আসলে মহা পরিকল্পনার সাথে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন? কারণ মানুষ হিসেবে আমরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো শারীরিক কোন সমস্যা নয়, বরং আধ্যাত্মিক সমস্যা। ঈশ্বর এটা জানেন আর সে জন্যই তিনি তাঁর কাছ থেকে আমাদের দূরত্বের সমাধানের ব্যবস্থাও করেছেন। তিনি যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমাদেরকে তাঁর কাছে যাবার পথ তৈরী করে দিয়েছেন।
বাইবেল বলে,‘‘ ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।’’১৫ যীশু খ্রীষ্টকে আমাদের পাপের জন্য, আমাদের পরিবর্তে ক্রুশে( প্রাচীন এক ধরনের শাস্তি) দেয়া হয়েছিল। তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তিনি কবরস্থ হয়েছেন, এবং তারপর তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন। তাঁর ত্যাগমূলক মৃত্যুর কারণে, আমরা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি—‘‘ তবে যতজন তাঁর উপর বিশ্বাস করে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি ঈশ্বরের সন্তান হবার অধিকার দিলেন।’’১৬
এটা সত্যিই বরং সহজ: ঈশ্বর আমাদের সাথে নিখুঁত একটি সম্পর্ক চান-- তাই তিনি যীশুর মাধ্যমে এই সম্পর্ক বাস্তবায়ন করেছেন। এটা আমাদের উপর নির্ভর করে যে আমরা ঈশ্বরকে খুঁজব এবং আমাদের জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করব। বেশিরভাগ মানুষই এই কাজটি প্রার্থনার মাধ্যমে করে থাকেন। প্রার্থনার অর্থ হল সৎভাবে ঈশ্বরের সাথে কথা বলা। এই মুহূর্তে আপনি ঈশ্বরের কাছে আন্তরিকতার সাথে এরকম কিছু বলতে পারেন: ‘‘প্রভু, আমি তোমাকে জানতে চাই। আমি এতদিন যাবৎ তোমাকে আমার জীবনে আসাতে অনুরোধ করি নি, কিন্তু আজ আমি এটা বদলাতে চাই। তোমার কাছ থেকে আমার বিচ্ছিন্নতার জন্যে তুমি যে সমাধান দিয়েছ সে সুযোগ আমি নিতে চাই। আমার পরিবর্তে যীশু যে মৃত্যুবরণ করেছেন সেটার উপর আমি নির্ভর করছি যাতে করে আমি ক্ষমা পাই এবং তোমার সাথে এক হতে পারে। আমি চাই আজ থেকে আগামীর সব দিনগুলোতেই তুমি আমার জীবনে থাক।’’
আপনি কি আন্তরিকতার সাথে ঈশ্বরকে আপনার জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন? এটা শুধুমাত্র আপনি এবং ঈশ্বরই জানেন। যদি আপনি তা করেই থাকেন, তাহলে সামনের দিনগুলোতে আপনার জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দেন যে আপনার বর্তমান জীবনে অন্যতম এক পরিতৃপ্তি আসবে কারণ আপনি তাঁর সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছেন।১৭ আমরা তার কাছে আসব আর তার সংগে বাস করব।১৮ আর তিনি আমাদের অনন্ত জীবন দেন।১৯
মেলিসা ঈশ্বরের সম্বন্ধে এই বলেন:‘‘ আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আমার মা আমার বাবার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন, এবং কী হচ্ছিল তার কিছুই আমি বুঝতে পারি নি। আমি শুধু এটাই জানতাম যে আমার বাবা আর ঘরে ফিরে আসবে না। একদিন আমি আমার ঠাকুমায়ের কাছে বেড়াতে গেলাম এবং তাকে বললাম যে আমার বাবা আমাকে কেন কষ্ট দিয়ে চলে গেল। ঠাকুমা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন যে এমন একজন আছেন যিনি আমাকে কখনও ছেড়ে যাবেন না, এবং সেই ব্যক্তি হলে যীশু খ্রীষ্ট। তিনি ইব্রিয় ১৩:৫ এবং গীতসংহিতা ৬৮:৫ এর বিষয়ে বললেন যেখানে বলা হয়েছে ‘‘আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে যাব না বা কখনও তোমাকে ত্যাগ করব না’ এবং ‘ঈশ্বর তাঁর পবিত্র বাসস্থানে অনাথদের পিতা।’ আমি এটা শুনে খুবই অনুপ্রাণিত হই যে আমি ঈশ্বরকে আমার বাবা হিসেবে চাই।’’
এই পৃথিবীতে আপনার চারপাশে যা কিছু হোক না কেন, মনের ভিতর এটা জানা আছে যে ঈশ্বর আপনার আছেন। ভবিষ্যতে যাই হোক না কেন আপনি ঈশ্বরের ওপর ভরসা করতে পারেন।
পাদটীকাসমূহ: (১) যিশাইয় ৪৪:৮ এবং মালাখি ৩:৬ বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত (২) ইব্রিয় ১২:৮ (৩)যোহন ১৪:২৭ এবং ১৬:৩৩ (৪)যিশাইয় ৪৫:২২ (৫)মথি ৭:২৪-২৭ (৬) যিশাইয় ৪৬:৯-১০ (৭) গীতসংহিতা ৪৬:১ (৮) যিরমিয় ২৯:১৩ (৯) ২য় করিন্থীয় ৪:৮-৯ (১০) নহূম ১:৭ (১১) ১ম পিতর ৫:৭ (১২) গীতসংহিতা ১৪৫:১৭-১৯ (১৩) মথি ১০:২৯-৩১ (১৪) যিশাইয় ৫৩:৬এ (১৫) যোহন ৩:১৬ (১৬) যোহন ১:১২ (১৭) যোহন ১০:১০ (১৮) যোহন ১৪:২৩ (১৯) ১ম যোহন ৫:১১-১৩